আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটিতে ফেভারিটের তকমা ছিলো বাংলাদেশের গায়েই। তবে ২০১৯ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তা পুরোপুরি বলাও যাচ্ছিলো না। সেবারও ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমে টেস্টে নবাগত দলটির বিপক্ষে ২২৪ রানের বিশাল হার সঙ্গী হয়েছিলো বাংলাদেশের। এবার তুলনামূলক এক নতুন দল নিয়ে মাঠে নামলেও সেই ভীতি ফিরে আসা একদম অমূলকও ছিলো না। তবে সেসব উতরে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ।
হোম অব ক্রিকেট শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী। তবে ব্যাটিংয়ের শুরুতেই জাকির হাসানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টেস্ট অভিষেকে নিজের প্রথম বলেই উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন নিজাত মাসুদ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন আফগান অধিনায়ক। নিজাতের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। খোঁচা দিয়েছিলেন জাকির হাসান। জোরালো আবেদনের পরও আম্পায়ার পল রাইফেল শুরুতে আউট দেননি। তবে আফগানরা রিভিউ নিলেও দেখা যায় ব্যাট ছুয়ে বল জমা হয়েছে উইকেট রক্ষক আশরাফ জাজাইয়ের গ্লাভসে।
এরপরের গল্পটা লিখেছেন তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ও ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। আফগান বোলারদের রীতিমতো শাসন করে স্কোরবোর্ডে রান তুলতে থাকেন দুজনে। জয় কিছুটা ধীর গতিতে থাকলেও শান্ত রান তুলছিলেন বেশ দ্রুত। প্রথম সেশনে ২৪ ওভারে ১১৬ রান তোলে বাংলাদেশ। অর্ধশতক তুলে নেন শান্ত। মধ্যাহৃ বিরতির পরও সে ধারা অব্যাহত রাখেন দুজনে। কার্যত সে সময় আফগান বোলারদের কোন সুযোগই দেননি এই দুই ব্যাটসম্যান।
বেশ কিছুদিন পর দলে ফিরে টেস্টে নিজের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন জয়। এরপর খানিকটা চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন এই ডানহাতি ব্যাটার। অপর প্রান্ত থেকে শান্তও স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছড়াতে থাকেন। ১১৮ বল থেকে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে ২১২ রানের জুটি গড়ে দলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান দুজনে।
শান্ত ও জয়ের এই প্রতিরোধ ভাঙে দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার খানিক আগে। ৪৫তম ওভারে রহমত শাহর একটি বল স্লাইড করে বের হয়ে যাওয়ার মুহুর্তে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন জয়। ১৩৭ বলে ৭৬ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসের সমাপ্তি হয়। এরপর মুমিনুল হককে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত। তবে নিজাত মাসুদের শর্ট বলের ফাঁদে পা দেন মুমিনুল। এবারো আম্পায়ারের সাড়া না পাওয়ায় রিভিউ নেয় আফগানরা। তাতেই নিজের দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পান নিজাত।
সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করার পথেই হাঁটছিলেন শান্ত। ব্যক্তিগত ১৪৩ রানে নিজাত মাসুদের বলে বোল্ড হলেও নো বলের কারণে জীবন পান শান্ত। তবে খানিক পড়েই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। আমির হামজার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ মিডঅনে ধরা পড়েন তিনি। ১৭৫ বলে ১৪৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ২৩টি চার ও ২ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। ক্রিজে এসে থিতু হতে পারেন নি এই টেস্টে অধিনায়কত্ব করা লিটন দাস। জহির খানের গুগলিতে পরাস্ত হয়ে দলীয় ২৯০ রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন।
মেহেদী মিরাজকে নিয়ে কোন অঘটন ছাড়াই দিনের বাকি সময়টা পাড় করে দেন মুশফিকুর রহিম। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে ছুঁটছে স্বাগতিকরা। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ৫ উইকেটে ৩৬২ রান। ৪১ রানে মুশফিক ও ৪৩ রানে অপরাজিত আছেন মিরাজ।
আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিয়েছেন নিজাত মাসুদ। একটি করে উইকেট পান রহমত শাহ, আমির হামজা ও জহির খান।