বয়স ৪১ বছর। এই বয়সের অনেক আগেই নিজেদের বুটজোড়া তুলে রাখেন বেশিরভাগ ফুটবলার। মাঠের খেলাতেও সে ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তবে সুইডিশ তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ সে ধাতের মানুষ নন। তিনি যেন গড়া লৌহ ও ইস্পাতের দৃঢ়তায়। তা না হলে কি আর এখনো ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর একটিতে দাপিড়ে বেড়াতে পারতেন। তবে সকলের মতো তাকেও শেষের পথে হাঁটতে হলো। টানা ইনজুরিতে গত কিছুদিন মাঠের বাইরে থাকা ইব্রাহিমোভিচ আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিয়েছেন ফুটবল থেকে।
চলতি বছর অক্টোবরে ৪২ পূর্ণ করবেন ইব্রাহিমোভিচ। এসি মিলানের সাথে তার চুক্তির মেয়াদও ফুরোচ্ছে চলতি মাস শেষে। ফলে ইব্রার ভবিষৎ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার পাশাপাশি আগ্রহেরও কমতি ছিলো না ফুটবল প্রেমীদের মনে। তিনদিন আগেই বলেছিলেন এখনই অবসরের ভাবনা নেই। তবে ৭২ ঘন্টা পেরোতেই নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ধরে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো ইব্রাহিমোভিচ। আর তাতে শেষ হলো দারুণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ এক ফুটবলারের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের।
ঘরের মাঠ সান সিরোতে মিলান-ভেরোনা ম্যাচটি হয়ে থাকলো তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। যদিও ইনজুরির কারণে মাঠে নামা হয়নি তার। তবে ম্যাচ শুরুর আগে বিদায়ের ঘোষণার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইব্রা। ভক্ত-সমর্থকরাও তার বিদায় বেলা রাঙিয়ে রাখতে গ্যালারিতে নিয়ে এসেছিলেন বিশাল সব ব্যানার। সঙ্গে ছিল তাঁর নামে জয়ধ্বনি। ছলছল চোখে সমর্থকদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ম্যাচ শেষে সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছেন গার্ড অব অনার।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে ইব্রা বলেন, ‘পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার দ্বিতীয় পরিবার-খেলোয়াড়দের। কোচ এবং স্টাফদেরও তাদের দায়িত্বের জন্য ধন্যবাদ, সুযোগ দেওয়ার জন্য ক্লাব পরিচালকদেরও। আর হৃদয় থেকে সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ জানাই ভক্তদের।’
১৯৯৯ সালে সুইডিশ ক্লাব মালমো এফসি দিয়ে শুরু। এরপর নেদারল্যান্ডস, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে শেষ পর্যন্ত সমাপ্তি টানলেন এসি মিলানে। ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ৯৮৮ ম্যাচে ৫৭৩টি গোল করেছেন তিনি। জিতেছেন ৩২টি ট্রফি।
যে এসি মিলান থেকে বিদায় নিলেন, সেখানে এর আগেও খেলে গেছেন ইব্রাহিমোভিচ। ২০১০-১১ মৌসুমে বার্সেলোনা থেকে ধারে খেলতে এসে পরের বছর চুক্তিবদ্ধ হয়ে থেকে যান সেখানেই। দ্বিতীয়বার ফেরেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। দুই দফায় মোট ১৬৩ ম্যাচ খেলে ইতালির ক্লাবটির হয়ে করেছেন ৯৩ গোল। তবে গত দুই মৌসুমে চোটের কারণে খেলার সুযোগ পেয়েছেন কমই। ঘরের ছেলেকে বিদায় বেলায় ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানিয়েছে এসি মিলানও।