জিসিসি নির্বাচনে আজমতের পথের কাঁটা জায়েদা!

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ২৫ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গাজীপুর সিটির ভোট। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এছাড়াও ১৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আসনে ৭৮ জন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জনসহ মোট ৩২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

বড় বিরোধী দল বিএনপি সিটি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের এবারের প্রার্থী এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। অন্যদিকে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে মনোনয়ন না দেয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের ও তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়পত্র জমা দেন। যদিও একটি খেলাপি ঋণগ্রহীতার জামিনদার হওয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হয়।

এদিকে, বিএনপির স্থানীয় ২৪ জন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটি নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ ও প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে এসব প্রার্থী জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন।

ভোটের মাঠে আছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি বিএনপির গতবারের মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। রনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের সমর্থন পাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আছেন গাজী আতাউর রহমান।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা তার মা জায়েদার পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচনের কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাথে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্বের জেরে মূলত আওয়ামী লীগের ভোটারদের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটাররা বলছেন, জাহাঙ্গীর সরাসরি নির্বাচনের মাঠে প্রার্থী হিসেবে না থাকলেও তার মা জায়েদা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে ভাঙন ধরাতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে টঙ্গী এলাকায় ভোটাররা এবারের নির্বাচনে ব্যবধান তৈরি করবে বলে মত দিচ্ছেন গাজীপুরের ভোটাররা।

তারা বলছেন, গাজীপুরে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রচুর সমর্থক আছে, তাই নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা নীরবে কাজ করছেন। এই ভোটে মূলত জায়েদা খাতুন আজমত উল্লার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যেহেতু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে তাই ভোটের মূল লড়াই হবে আজমত ও জায়েদার মধ্যে।

গাজীপুর জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী আজমতকে সমর্থন জানালেও জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু অনেকেই বাধ্য হয়ে বা দলীয় শাস্তির ভয়ে তা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, জাহাঙ্গীরের অনুগত প্রায় ২০০ জন নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। এই ২০০ জনের মধ্যে অন্তত ১৯ জন মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদের দায়িত্বে আছেন, বাকিরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী।

তবে দল থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, আমার মায়ের নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক নেতাকর্মী আমার সঙ্গে নেই। তবে কর্মী-সমর্থকরা আমার সঙ্গে আছেন। শাস্তির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে পারছেন না।

টঙ্গীতে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাকে শুধু জায়েদা খাতুন না সামলাতে হবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাগ্নে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনিকেও। কারণ তরুণ এই নেতা টঙ্গীতে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীও টঙ্গীর। এমন বাস্তবতায় টঙ্গীর ভোটারদের দিকেও চেয়ে থাকবেন মেয়র প্রার্থীরা।