প্রচণ্ড খরতাপে আমের ক্ষতির আশঙ্কা চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে এবছর ব্যাপক ফলন হয়েছে। জেলার প্রতিটি বাগানে থরে থরে ঝুলছে সুস্বাদু নানা জাতের আম। চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রচুর মুকুল আসে আম বাগানে। মুকুল থেকে গুটি হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও দেখা যায়নি। এরমধ্যেই দেড় থেকে দুই ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়েছে আম।

তবে আম গাছে গুটি আসার পর থেকে এখনো পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ার প্রভাব পড়েছে আমের বৃদ্ধিতে। বেশিরভাগ গাছের আমের আকার কাঙ্খিত মাত্রায় বড় হচ্ছেনা। আবার অনাবৃষ্টিতে আমের বোঁটা শুকিয়ে যাওয়ায় ঝরেও পড়ছে। এ অবস্থায় আতঙ্কে আছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে গাছে ব্যাপক মুকুল ও আমের গুটি আসায় বাম্পার ফলন নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ভালো ব্যবসা হবে, এমন স্বপ্নও বুনছেন অনেকেই। কিন্তু প্রচণ্ড খরায় সবার কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। চাতক পাখির মত বৃষ্টির প্রহর গুনছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিরা।

সদর উপজেলার গোবরাতলার আম চাষি মো. মমিন আলী জানান, এবার বাগানে মুকুল আসার পর থেকে ভালো ফলনের বিষয়ে খুবই আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মুকুল ফুটে আমের গুটি বের হওয়া পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় তার বাগানে আমের বোঁটা শুকিয়ে আম ঝরে পড়ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মমিন।

গোলাম জাকারিয়া নামের তরুণ এক আম ব্যবসায়ী বললেন, নিজেদের বাগানের পাশাপাশি আরও কিছু আম বাগান কিনেছেন। এখন পর্যন্ত বাগানের পরিচর্যায় বড় অংকের অর্থ ব্যয় হয়েছে তার। তার বাগানের অনেক আম এরমধ্যেই ঝরে গেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আমের বোঁটা শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছে গোড়ায় সেচের পানি দিয়েও পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাচ্ছেনা বলে হতাশা প্রকাশ করেন জাকারিয়া। বলেন, বৃষ্টির পানির বিকল্প কিছু দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না।

শিবগঞ্জ উপজেলার চকনরেন্দ্র এলাকার আম ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ জানান, গত ১৫ বছর আগে থেকে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে আম উৎপাদনের সাথে জড়িত তিনি। এবছর আমের ফলন দেখে খুব আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু গেল কয়েকদিনের খরতাপে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

তিনি বলছেন, সেচ দিয়েও তেমন সুফল মিলছেনা। তাছাড়া অনেকগুলো বাগানে এভাবে সেচ দেয়াও ব্যয়বহুল ব্যাপার। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন সামাদ।

এ অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে আম চাষিদের অভয় দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলছেন, এবার আম বাগানগুলোতে অতিরিক্ত আমের গুটি এসেছে। স্বাভাবিকভাবে অনেক আম ঝরে পড়তে পারে। এ নিয়ে চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বলেন, গাছে অতিরিক্ত আম থাকলে আকার ছোট হয়ে যাবে। কারণ অতিরিক্ত আম ঠিকমত খাদ্য না পেলে সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাবে না। এজন্য কিছু আমের গুটি খাদ্যের অভাবে ঝরে পড়বে। তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় আমের ক্ষতি কমাতে চাষিদের সপ্তাহে একদিন সেচের মাধ্যমে গাছে পানি দেয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

ড. রহমান আরও বলছেন, চলতি মৌসুমে আমের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়েও বেশি আম উৎপাদনের বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

এখনো পর্যন্ত আম বাগানে কোনরকম পোকার আক্রমণ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আম মার্বেল সাইজ হওয়ার পর এক ধরনের পোকার আক্রমণ হয় কিন্তু এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রায় সে পোকার আক্রমণ থেকে আম মুক্ত রয়েছে। তবে আগামীতে পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষা করতে চাষিদের সার কীটনাশকের পাশাপাশি ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন ড. মোখলেসুর রহমান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর আম বাগানে আম উৎপাদনের কথা জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। এ বছর জেলায় চার লাখ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।