সাংবাদিকের করা সাইবার মামলায় বগুড়ার বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১২টি বই পড়ার সাজা দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ আদেশ দেন। তবে আদালত তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য সাতটি শর্তে প্রবেশন দিয়েছে।
দুই আসামি হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা ও শহর যুবদলের আহ্বায়ক আদিল শাহরিয়ার গোর্কী। মামলার বাদী বগুড়ার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক মহাস্থানের প্রকাশক তানভীর আলম রিমন।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, প্রবেশনের সাত শর্তের মধ্যে তৃতীয় শর্ত হলো, দুই আসামিকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ১২টি বই পড়তে হবে। কী কী বই পড়তে হবে সেটিও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন আদালত। বইগুলো হলো একাত্তরের দিনগুলি (জাহানারা ইমাম), একাত্তরে চিঠি (রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা), মা (আনিসুল হক), মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল (ড. কামাল হোসেন), আমার মুক্তিযুদ্ধ (আনিসুজ্জামান), উষার দুয়ারে (আনিসুল হক), দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ (রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী), আমি বিজয় দেখেছি (এম আর আক্তার মুকুল), চরমপত্র (এম আর আক্তার মুকুল), আমি বীরাঙ্গনা বলছি (নীলিমা ইব্রাহিম), হাঙর নদী গ্রেনেড (সেলিনা হোসেন) এবং রাইফেল রোটি আওরাত (আনোয়ার পাশা)।
আদালতের দেয়া প্রথম শর্তানুযায়ী দুই আসামিকেই মামলার বাদী তানভীর আলম রিমনের কাছে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো আসামিদের ১০টি ফলজ ও ১০টি বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হবে।
অন্য শর্তগুলোর মধ্যে আছে, আসামিদের নিজ নিজ আইডি থেকে সাইবার সচেতনতা বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, প্রবেশনকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামিরা কোনরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না; আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন।
ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই আসামি এক লাখ করে দুই লাখ টাকা আদালতে জমা দেবেন। ক্ষতিপূরণের এক লাখ টাকা পাবেন বাদী এবং এক লাখ পাবে রাষ্ট্র।
আইনজীবী ইসমত আরা বলেন, আসামিরা প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রত্যেকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাদের।
প্রবেশন কর্মকর্তা প্রতি তিন মাস পরপর আসামিদের প্রবেশন শর্ত প্রতিপালন ও গতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন। তাদের প্রবেশন সন্তোষজনক হলে এই দণ্ড তাদের চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না।
মামলার বাদী তানভীর আলম রিমন জানান, বগুড়ার বিএনপির রাজনীতি নিয়ে তিনি তার পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা তাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এই ফেসবুক পোস্টে তাকে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয় এবং তাকে যেখানে দেখা যাবে সেখানেই মারধরের জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। যুবদল নেতা আদিল শাহরিয়ার গোর্কীও তার ফেসবুকে এই সাংবাদিকের ছবি পোস্ট দেন এবং ক্যাপশনে আপত্তিকর কথাবার্তা লেখেন।
সাংবাদিক তানভীর আলম রিমন আরও জানান, আপত্তিকর এসব ফেসবুক পোস্ট নজরে এলে তিনি ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এর মধ্যে রাজশাহীতেও সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে মামলাটি ঢাকা থেকে রাজশাহী আসে। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।