শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। এছাড়া স্থগিত হওয়া ক্লাস-পরীক্ষা মঙ্গলবার থেকে যথারীতি চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুর একটায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান রাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে ক্লাস পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে। সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুইদিন ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছিলাম। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসে সকল বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ড সাথে নিয়ে থাকার জন্য বলা হলো।
উপাচার্য আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের বেশি দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রেও তাদের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত গেইট থাকায় এমন সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা গেইটের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।
তিনি বলেন, স্থানীয়দের সাথে আমার ছাত্রদের যে সংঘর্ষ হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। বাস কন্ডাক্টারের সাথে শিক্ষার্থীদের যে ঝামেলা বেঁধেছিল তাতে স্থানীয়রা না জড়ালে এমন সংঘর্ষ হতো না। কিন্তু কতিপয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে জড়িয়ে পড়ায় এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। এ ঘটনায় আমার দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারও উন্নত চিকিৎসা লাগলে আমরা তার ব্যবস্থা করব। তাদের সকল চিকিৎসা ব্যয় আমরা বহন করছি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গতকাল সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন হয়, প্রথম দিকে আমাদের শিক্ষার্থীরাই ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও কার্যক্রমে বহিরাগতরা যুক্ত ছিল বলে আমার মনে হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তাই রেললাইনসহ ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আগুন জ্বালিয়ে যানবাহন বন্ধ রেখেছে এসব বহিরাগতরা। কাল পরশু আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে বসবো। তখন তাদের দাবিগুলো আমরা পূরণ করার চেষ্টা করব।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামীকাল মেস মালিক সমিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা বসবো। শিক্ষার্থীদের জন্যই তো মেস মালিকরা চলে। তাই তাদের প্রতি যেন স্থানীয়রা কোনও ধরনের অন্যায় না করে সে বিষয়ে দেখভাল করা উচিত। আমরা চাই মেস মালিকদের সাথে আমাদের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের একটি সখ্যতা গড়ে উঠুক। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। এটি যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা চাই সকলের সাথে আমাদের একটি মেলবন্ধন থাকুক।
ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ইঞ্জিনিয়ার সেকশন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তারা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করবে। আমাদের ছাত্রদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের মানিব্যাগ, সেলফোন থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রভোস্ট কাউন্সিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মূল ঘটনার সূত্রপাত ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দুইজন সদস্য বাড়িয়ে পাঁচজন করেছি। তদন্তের পর আমরা বিশদভাবে জানাতে পারবো।