দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চালু হল সুনামগঞ্জের রাণীগঞ্জ সেতু। জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্ববৃহৎ এ সেতু চালু করার মধ্যদিয়ে জেলাবাসীর যোগাযোগসহ ব্যবসা বাণিজ্য নতুন মাত্রা পাবে। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০২ মিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতু চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমে গেল ৫৫ কিলোমিটার।
সোমবার সকাল ১১ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটির উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে সিলেট বিভাগের ১৭টি ও দেশের বিভিন্ন বিভাগের ১০০টি সড়ক সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘রাণীগঞ্জ সেতুটি চালু হওয়ায় আমরা ভাটি অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত খুশি। রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার রাস্তা খুলেছে। দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় বাঁচবে। আমাদের অনেক পরিবর্তন হবে। আমাদের আরও অনেক সেতু ও সড়ক নির্মাণ করতে হবে। আরও হাসপাতাল, স্কুল কলেজ নির্মাণ করতে হবে।’
এম. এ. মান্নান আরও বলেন, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য উড়াল সেতুর টেন্ডার হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই কাজ উদ্বোধন হবে। রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণে এর শ্রমিক, প্রকৌশলী অনেক শ্রম দিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীও অনেক সহযোগিতা করেছেন। এজন্য তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞা জানাই। জনগণের সম্পত্তি জনগণ রক্ষা করবে। এর উপকারভোগী জনগণ।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোশারফ হোসেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দীন আহম্মেদ, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদেল বখত, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেন প্রমুখ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, পাগলা-জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ-আউশকান্দি মহাসড়কের রাণীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ওপর রাণীগঞ্জ পিসি গার্ডার ও বক্স গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০২ মিটার দীর্ঘ ও সাড়ে দশ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণ করা হয়। রাণীগঞ্জ ও রসুলপুর এলাকার মধ্যে এই সেতুর অবস্থান। সেতুতে রয়েছে ১৫টি স্প্যান ও ১৬টি পিলার। ফ্লাড লেভেল থেকে ১২ মিটার উঁচু দুই লেনের সেতুর দুই পাশে রয়েছে আড়াই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, দুটি কালভার্ট, টোলপ্লাজা, এক্সেল লোড ও কন্ট্রোল স্টেশন।
সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট। সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজা নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো কোম্পানি লিমিটেড এবং এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেতুর প্রকল্প নকশা সংশোধন ও করোনা পরিস্থিতির জন্য সেতুর কাজ শেষ করতে দেরি হয়েছে।
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ওই সড়ক অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে সড়কের বরাদ্দ বন্ধ করে দিলে সেতু নির্মাণ কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ পুনরায় চালুর চেষ্টা শুরু করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার তালিকায় এটি নিয়ে আসেন এবং একনেকে ৫২ কোটি টাকার অনুমোদন হয়।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন। পরে ওই বছরের জুন মাসে সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় দেশি-বিদেশি তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের আগস্ট যৌথভাবে কার্যাদেশ পায় চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এবং এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। পরে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্তমান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণকাজের সময়সীমা তিন বছর ও ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে পরবর্তী সময়ে কয়েক ধাপে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়।