বছর চারেকের বেশী হবে, সেপ্টেম্বর ২০১৫, তাঁকে দেখা যায় ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে সারা শরীর সাদা কাপড়ে, কখনো বা কালো কাপড়ে ঢেকে বসে আছেন। সাদা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় বুকের কাছে এক ছোপ রক্ত। সে অবস্থায় ছবি তুলছেন কখনো, কখনো ঘুরে বেড়াচ্ছেন ট্যুরিস্টদের মাঝে। আর কালো কাপড়ে শরীর ঢেকে বেঞ্চিতে বসে তিনি পড়ছেন কোনো পত্রিকা।
এ সময়েই তিনি ছবি আঁকছেন, একই পোশাক পরে, অদ্ভ‚ত রকমের সাদা আর কালো, কখনো দু’পায়ে পত্রিকা মোড়ানো। আর সেসবের প্রদর্শনী করছেন সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা বালিয়াড়িতে। ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এই শিল্পী সে সময়ে বিশ্বব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনীর অংশ হিসাবে সিঙ্গাপুরেও তাঁর চিত্রকর্ম প্রদর্শন করেন।
বাংলার কণ্ঠ’র ব্যবস্থাপনায় ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি ছবি এঁকেছিলেন নিজের মুখাবয়বসহ সম্পূর্ন শরীর কালো কাপড়ে ঢেকে। নাটকের সংলাপের সাথে পার্থিব চোখ ঢেকে মনের চোখ দিয়েই সেদিন তাঁর তুলির ছোঁয়ার যুগলবন্দীতে তিনি ফুটিয়ে তোলেন অভিবাসীদের সুখ-দুঃখ-বেদনার চিত্র। বাংলাদেশ সেন্টার, সিঙ্গাপুরে ‘মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কাস পারফরমেন্স এন্ড ভিজুয়াল আর্টস’ শীর্ষক ঐ প্রদর্শনীতে তাঁর প্রায় দেড়শটি পেইন্টিংয়ে সেদিন ফুটে উঠেছিল সময়ের দৈন্য আর চাকচিক্যের দ্বদ্ব।
আগস্ট, ২০১৭ সময়েও শিল্পীকে দেখা যায় পুরো শরীর সাদা পোশাকে জড়িয়ে, দুটো চোখের কাছে শুধু ফুটো করা। একবার মনে হলো শিল্পীকে জিজ্ঞাসা করি, তিনি কি ভবিষ্যত দেখতে পান? তখনই দেখতে পেয়েছিলেন কি আসলে করোনাকালীন পোষাক? সাহস হলো না। আসলে কোনো কোনো মানুষ, যখন সময়কে অতিক্রম করে যান, তখন ভবিষ্যত দেখেন।
সেটা তাঁর গোপন কথা। এ কথা নাই বা জিজ্ঞাসা করি। এই ১৮ মার্চ জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিল্পীর আঁকা কিছু ছবির প্রদর্শনী হলো। গত নভেম্বরে তাঁকে দেখা গেল গোপালগঞ্জে জাতির জনকের সমাধির পাশে শিল্পী বন্ধুদের নিয়ে আর্ট ক্যাম্প করছেন, আনন্দ করছেন।
সেই শিল্পী দেওয়ান মিজান মার্চের পর আঁকছেন করোনা-কালের ছবি। জলরঙে সাদা ক্যানভাসে তুলির কালো আঁচড়ে তিনি আঁকছেন বিভিন্ন ফর্ম। বোঝা যায়, শিল্পী ব্যথিত। তিনি ড্রাগন আঁকেন, মনে হয় ড্রাগনকেও তাড়া করছে করোনা। তিনি আর নৌকা আঁকেন না, তাঁর ক্যানভাসে মাঝিরা নৌকোয় করে মাছ ধরতে যায় না। তাঁর ক্যানভাসে বাতিঘরে রাতে আর জ্বলে না আলো।
তিনি আঁকেন মাস্কপরা বেবুন। তাঁর এপ্রিলের ক্যানভাসে আকাশ থেকে নামে অদ্ভ‚ত সব ড্রাগন, তারাও থাকে মাস্ক পরে। তিনি এই করোনা দুর্যোগে প্রায় পঞ্চাশটির মতো ছবি এঁকেছেন। জয়নুল যেমন এঁকেছিলেন তেতাল্লিশের মন্বন্তরের ছবি, সেসব ছিল মূর্ত। দেওয়ান মিজানের করোনাকালের ছবি বিমূর্ত নয় একেবারে। তাঁর ছবির সাহসী মানুষের দুঃখের দিনে আকাশ থেকে নীলরঙা নিদান নামে।
তিনি এই দুঃখের অতিথিকে গৃহে জায়গা দিতে চান না। তাঁর সাহসী মানুষেরা হাতের মুঠোয় আগুন ধরে বলে ওঠে, “উই শ্যাল ওভারকাম”। তিনি আমাদেরকে তুলির টানে জানাতে চান, শিল্পীর সুরের ট্রাম্পেটে করোনা বাসা বাঁধতে পারে না। তাঁর সাহসী মানুষদেরকে করোনার পিরানহা খেয়ে ফেলতে পারে না। সুসময়ের বাতাসে একসময় নৌকাগুলো পাল তুলবে, আকাশে দেখা দেবে স্বচ্ছ মেঘ, হয়তো বৃষ্টি নামবে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |