বাজারে যখন ডলারের সংকট চলছে, হু হু করে বাড়ছে দাম, ঠিক তখন ‘অশনি’ বার্তা দিল প্রবাসী আয়। হঠাৎ করে কমে গেছে রেমিটেন্স প্রবাহ। গত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম। গত ১ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে দেশে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিটেন্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। আর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় এবার ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ২৩ মে যত খুশি তত রেমিটেন্স পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে সাকুর্লার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী এখন পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্স এলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। তবে অবাধে অর্থ পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার পরও বাড়েনি রেমিটেন্স প্রবাহ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।
গত ১৫ জুন জাতীয় সংসদে পিরোজপুর—৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১—২২ অর্থবছরে রেমিটেন্স কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং জুলাই—এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৭.৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.২৫ শতাংশ কম। বিগত ২০১৯—২০, ২০১৮—১৯ ও ২০১৭—১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রেমিটেন্সের গড় ছিল ১৩.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোভিড পূর্ববর্তী তিন বছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত রেমিটেন্সের গড় অপেক্ষা ২০২১—২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৮.৯১ শতাংশ বেশি। কাজেই, চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স হ্রাস পেয়েছে না বলে বলা যেতে পারে রেমিটেন্সের প্রবাহ কোভিড পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি ২০২১—২২ অর্থবছরে প্রবাস আয় হ্রাসের কারণগুলো হচ্ছে ২০২০—২১ অর্থবছরে শুরুতে কোভিড অতিমারিতে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা—বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে নিয়ে এসেছেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে রেমিটেন্স কমার পেছনে স্বর্ণ সিন্ডিকেট দায়ী, সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এতে বলা হয়েছে, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে এর পরিবর্তে স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণের বার দিয়ে দিচ্ছে। সেই স্বর্ণ সিন্ডিকেটের এ দেশীয় এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করেই প্রবাসীরা টাকা পেয়ে যাচ্ছে। ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ১০০ গ্রাম (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে শুল্ক—কর দিতে হয় না। এছাড়াও ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণ বার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা করে শুল্ক দিতে হয়। সে অনুযায়ী স্বর্ণের বার আনলে ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। ১০০ গ্রামের (সাড়ে ৮ ভরি) অলঙ্কার আনার ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না থাকায়, অনেক যাত্রী শুল্ক—কর দিয়ে বাড়তি অলঙ্কার সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফেরত আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করে। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে। এতে আরও বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিটেন্স না পাঠিয়ে স্বর্ণ আনলে প্রবাসীরা কয়েকভাবে লাভবান হচ্ছে। প্রথমত, কম দামে স্বর্ণ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ব্যাংকের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছে। তৃতীয়ত, রেমিটেন্সের অর্থ পেতে প্রবাসীকে কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ২৪ ক্যারেট প্রতিভরি স্বর্ণের দাম দেশ ভেদে ৫৮ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বিমানবন্দরে ২ হাজার টাকা শুল্ক দেওয়ার পর স্থানীয় বাজারে সেই স্বর্ণ প্রতিভরি ৭২ থেকে ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি ভরিতে মুনাফা হচ্ছে প্রায় ১০—১৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০—২১ অর্থবছরের অক্টোবর—ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১—২২ অর্থবছরে রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি কমেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে, ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, কাতার থেকে ৫০ দশমিক ৭১ শতাংশ, কুয়েত থেকে ১৬ শতাংশ কমেছে। এসব দেশ থেকেই বেশি স্বর্ণ আসছে। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে ৪৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে ৫৭ শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে। এ দুটি দেশ থেকেও স্বর্ণ আনার ঘটনা ধরা পড়েছে। ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিটেন্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে আসার ফলে অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা কমছে বা কমতে পারে। অন্যদিকে স্বর্ণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।
প্রবাসী আয়ের অশনি সংকেত এর পাশাপাশি খবর পাওয়া গেল সুইস ব্যাংকে টাকা জমার ক্ষেত্রে রীতিমতো রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরা! দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফঁ্রা, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রা বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড—২০২১’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তিন বছর ধারাবাহিক হ্রাসের পর ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণের বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমানোর পরিমাণ কমে আসে। ২০১৮ সাল সুইস ব্যাংকে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ জমা করেছিলেন বাংলাদেশিরা। ২০১৯ সালে তা নেমে ৬০ কোটি ৩০ লাখে দাঁড়ায়, পরের বছর জমানো অর্থের পরিমাণ হ্রাস পায় আরও ৪ কোটি ফ্রাঁ। সর্বশেষ ২০২১ সালে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়ে এক লাফে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে ওঠেছে। যদিও এসএনবি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে অর্থ পাচার সংশ্লিষ্ট কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রকাশ করা হয়নি কোন ব্যক্তি কত অর্থ জমা করেছেন। অর্থ জমাকারী সম্পর্কে কোন তথ্য কখনই প্রকাশ করে না এসএনবি। প্রতিবেদন অনুযায়ী একক দেশ হিসেবে সুইস ব্যাংকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্যারিবিয় দ্বীপ রাষ্ট্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এসএনবি প্রকাশিত তালিকায় এর পরে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স, হংকং, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও লুক্সেমবুর্গ।
দীর্ঘকাল যাবত নাম পরিচয় গোপন রেখে অর্থ জমা রাখার জন্য ধনীদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংকে থাকা এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। নাম পরিচয় গোপন থাকায় সুইস ব্যাংকগুলোতে সারাবিশ্ব থেকেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ রাখা হয়। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। তবে ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ার পর বার্ষিক ভিত্তিতে জমা টাকার হিসাব দিচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বছর ভিত্তিতে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। তবে কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয় না।
তবে কোন অপরাধের গোপনীয়তার এই নীতি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোন অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশে কোন বাধা নেই। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশে বাধ্য, সেই অপরাধ সুইজারল্যান্ডেই হোক, আর অন্য কোন দেশেই হোক। তবে সেজন্য সেসব অপরাধে ঐ গ্রাহকের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে। বাংলাদেশে এরশাদ সরকারের পতনের পর সুইস ব্যাংকে তার (এরশাদ) টাকা ফেরত আনার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এই কাজে ফায়ার ফক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা ফেরতের কোনো খবর আর পাওয়া যায়নি। তবে পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা ফেরত আনার উদাহরণ আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে বিত্তবানরা দেশকে নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। অবশ্য সুইস ব্যাংকে জমানো সব অর্থই পাচার হওয়া এমনটা নয়। কারণ প্রবাসী বাংলাদেশিরাও সেখানে টাকা জমা রাখছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংক আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্যও অর্থ জমা রাখতে পারেন। সেখানে জমানো অর্থের কিছু অংশ পাচার হয়েও যেতে পারে। তবে আলাদা করে তথ্য প্রকাশ না করলে প্রকৃত ভাবে বলা যাবে না কত টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে ১০টি দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অন্তত ২৩টির বেশি মামলা এখনো চলছে। এগুলো শেষ হলে হাজার কোটি টাকার বেশি ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে কিছু দেশ থেকে অর্থ ফেরত আনতে বিদ্যমান আইন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরসহ উভয় সরকারের মধ্যে চুক্তির প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের (বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম) সদস্য। এমএলএর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে যোগাযোগ করে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা যেতেই পারে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগও প্রয়োজন।
দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু এর কোনোটিই কার্যকর হয়নি। অবশেষে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বাজেটে পাচারকারীদের দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা। কিন্তু এর কার্যকারিতা ও নৈতিক দিক নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের প্রণোদনার সিদ্ধান্তে অর্থ ফেরত আসা তো দূরের কথা, পাচারকারীরা হবে আরও উৎসাহিত। উল্লেখ্য, অতীতে নির্দিষ্ট অঙ্কের কর পরিশোধ করে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলেও তাতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। প্রণোদনা দিয়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রেও ঘটবে একই ঘটনা। কারণ কেউ অর্থ পাচারকারী হিসাবে চিহ্নিত হতে চাইবে না। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নটি আরও বড়। অর্থ পাচার একটি বড় অপরাধ। মূলত ঘুস—দুর্নীতির টাকা দেশ থেকে পাচার করা হয়। এই অপরাধীদের নির্দিষ্ট অঙ্কের করের বিনিময়ে বৈধতা দেওয়া তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার শামিল। এটি বৈষম্যমূলকও বটে। কারণ একজন পাচারকারী মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়েই পাচারের অর্থের বৈধতা পাবে। অথচ একজন নিয়মিত করদাতাকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। কাজেই অর্থ পাচার রোধে এটি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে না। দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন রয়েছে। এ আইন অনুযায়ী পাচার করা সব অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, তার দ্বিগুণ জরিমানা করতে হবে। এছাড়া ৪ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে আইনে। তবে তার আগে পাচারের অর্থ কোথায় যায়, তা চিহ্নিত করতে হবে এবং সেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। একইসঙ্গে দেশ থেকে অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করে তা বন্ধ করতে হবে।
অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ পাচারের হারও দিন দিন বাড়ছে। কাজেই দুর্নীতি রোধেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। অর্থ পাচার রোখার একমাত্র উপায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বজ্র আঁটুনি কঠিন করা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।