বিমানবন্দরের যাত্রীদের টার্গেট করে নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে প্রতারক চক্র। ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার পর যাত্রীদের স্বজনদের কাছে ফোন করে ‘যাত্রী বিপদে’ পড়েছে বলে টাকা নিচ্ছে তারা। যাত্রীরা দাবি করছেন, বিমানবন্দরের কর্মীদের যোগসাজস ছাড়া এমন প্রতারণা সম্ভব নয়।
গত ১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুর যেতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন আলী নূর। কোনও ঝামেলা ছাড়াই বোর্ডিং, ইমিগ্রেশন পার হন। ফ্লাইটে উঠেও কথা বলেন বাড়ির লোকজনের সঙ্গে। জানালেন, তিনি উড়োজাহাজে উঠেছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্লাইট ছেড়ে যাবে। সিঙ্গাপুর পৌঁছে কল করবেন।
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো কিছুক্ষণ পর। আলীর বাড়িতে কল এলো একটি নম্বর থেকে। ফোন ধরেন আলী নূরের ভাবি। তাকে বলা হলো, বিমানবন্দরে আলীর সমস্যা হয়েছে। তাকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্যার সমাধান করতে ২৫ হাজার টাকা লাগবে।
ফোন কল পেয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না পরিবারের লোকজন। তাই তারা আলী নূরের ফোনে কল করলেন। কিন্তু বন্ধ পেলেন তার নম্বর। আবার এলো কল। বলা হলো তারা যেন দ্রুত টাকা পাঠায়। না হলে আলী নূরের সিঙ্গাপুর যাওয়া হবে না। পরিবারের লোকজন আলী নূরকে ফোন দেওয়ার জন্য বললো। তখন আরেকজন কথা বলেন। সেই কণ্ঠ আলী নূরের মতো মনে হওয়ায় বিকাশে ২৫ হাজার ২৭৫ টাকা পাঠায় পরিবারের লোকজন।
এদিকে চার ঘণ্টা পর সিঙ্গাপুর পৌঁছান আলী নূর। বিমানবন্দরে নেমেই বাড়িতে ফোন করেন। জানালেন নিরাপদে পৌঁছেছেন। তখন বাড়ির লোকজন জানতে চাইলে আলী নূর বলেন, তিনি এ ধরনের কোনও সমস্যাতেই পড়েননি। মূলত ফ্লাইট ছাড়ার পর নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যান। তখনই প্রতারক চক্র পরিবারের কাছে মিথ্যা বিপদের কথা বলে টাকা নিয়েছে।
আলী নূরের পরিবারের লোকজনের প্রশ্ন, তার বাড়ির ফোন নম্বর কীভাবে পেলো প্রতারক চক্র? এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আলী নূর বলেন, ‘আমি লাগেজে নাম ও বাড়ির ফোন নম্বর লিখে রেখেছিলাম। ফ্লাইটে তো আমার নম্বর বন্ধ থাকবে। কোনও দরকার হলে যেন আমার বাড়িতে ফোন যায়, এ জন্য লিখেছিলাম। আমার ধারণা লাগেজ থেকেই কোনও এক ফাঁকে কেউ নম্বর টুকে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন উড়োজাহাজে উঠেছি, তার আধাঘণ্টা পরই বাড়িতে কল করে প্রতারকরা। টাকা তো গেলোই, কিন্তু বাবা-মার ওপর দিয়ে যে মানসিক ঝড় গেলো সেটার কথা ভাবছি। ফ্লাইট কখন ছাড়ে না ছাড়ে এসব জেনেই প্রতারকরা কল দেয়। এ তথ্য তো বাইরের কারও জানার কথা নয়।’
শুধু আলী নূর নন, বাংলা ট্রিবিউন-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে আরও কয়েকজন প্রবাসী একই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় কোনও কোনও যাত্রীর কাছ থেকে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা পরিচয়ে বাড়ির নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর ফ্লাইট ছেড়ে গেলে ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। কখনও বলা হচ্ছে ইমিগ্রেশনে সমস্যা, কখনও বোর্ডিং কার্ডে; কখনও বা ভ্যাকসিন, করোনা পরীক্ষার সনদে সমস্যা বলে টাকা চাওয়া হচ্ছে।
৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা নিচ্ছে প্রতারকরা। মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমেই তারা এ টাকা নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘যাত্রীর স্বজনদের কাছে বিমানবন্দরের কোনও কর্মী টাকা চাইবে না। যাত্রীর যদি টাকার প্রয়োজন হয়, যাত্রী নিজেই সেটার ব্যবস্থা করবেন। বাইরে গিয়ে টাকা আনতে পারেন কিংবা ফোন করে স্বজনদের সহায়তা চাইতে পারেন। কিন্তু বিমানবন্দরের কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যাত্রীর স্বজনদের কাছে এভাবে টাকা চাইবে না। বিষয়টি যদি যাত্রীর স্বজনরা বোঝেন, তবে আর প্রতারণা ঘটবে না।’
মোহাম্মদ জিয়াউল হক আরও বলেন, মূলত যাত্রীর ফ্লাইট ছাড়ার মুহূর্তে স্বজনরা চিন্তায় থাকেন। এ সুযোগই কাজে লাগায় প্রতারকরা। অনেক যাত্রী অল্প আলাপেই নিজের পরিবারের ফোন নম্বর প্রতারকচক্রকে দিয়ে দিচ্ছে। কখনও তারা যাত্রীর ব্যাগ থেকেও টুকে নেয়। যাত্রী ও স্বজনদের কাছে অনুরোধ করবো—এ ধরনের ফোনকলে টাকা দেবেন না, বরং থানায় অভিযোগ করুন।’
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |