বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে শুধু যে নিম্ন-মধ্যআয়ের দেশগুলোর মানুষই বিপর্যস্ত হয়েছেন তা নয়। করোনার কারণে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সিঙ্গাপুরের নিম্নআয়ের মানুষদেরও খাদ্য সংকটে পড়তে দেখা গেছে। সম্প্রতিকালে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মহামারির মধ্যে গত বছর খণ্ডকালীন ওয়েটারের চাকরিটি হারিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন ড্যানি গোহ নামের একজন। প্রায় ৮ মাস ধরে তিনি কাজ খুঁজছেন। স্ত্রী ও ৪ সন্তান নিয়ে সংসার চালানো ড্যানির পক্ষে অসম্বভ হয়ে উঠেছে। স্বজন-বন্ধুদের পাঠানো ইনস্ট্যান্ট নুডলস, বিস্কুট ও কফিতে পাউরুটি ভিজিয়ে খেয়ে বেঁচে আছেন ড্যানির পরিবার।
ড্যানি একটি কমিশনভিত্তিক চাকরি পেয়েছেন। যেখানে মানুষকে সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে নিবন্ধন করাতে হয়। এতে তার আয় হয় ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ সিঙ্গাপুর ডলার। যেটা তাদের মতো বড় পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়।
ড্যানির কাছে কোন জমানো অর্থও নেই। অর্থাভাবে তাদের এখন শুধু ২ বেলা খেয়ে থাকতে হয়। তাও সাধারণ খাবার। সন্তানদের মুখে খাবার দিতে প্রায়শই তাকে দিনে একবেলা খেতে হয়।
সিঙ্গাপুরের উত্তরাঞ্চলে ২ কক্ষের একটি সরকারি বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন ৬১ বছর বয়সী ড্যানি। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছি।’ শুধু ড্যানিই নন দেশটিতে এমন আরও অনেকে আছেন, যারা খাদ্য সংকটে ভুগছেন। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফুড প্যারাডাইস’ হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরের মতো সমৃদ্ধশালী দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন স্বল্পআয়ের দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে তা সহজেই অনুমেয়।’
চলতি বছরের শুরুতে সিঙ্গাপুরের দাতব্য সংস্থা বিয়ন্ড সোশ্যাল সার্ভিসের জরিপে দেখা গেছে, মহামারির কারণে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি ফ্লাটে ভাড়া থাকা পরিবারগুলোর খাদ্য সংকট অনেক বেড়েছে।
অনেক পরিবার দিনে একবার খাবার পাচ্ছেন। বাচ্চাদেরও ঠিক মতো খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশটির জনগণের স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি মানসিক চাপ অনেক বেড়েছে।
২০১৯ সালে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে খাদ্য নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির লিয়েন সেন্টার ফর সোশ্যাল ইনোভেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১২ মাসে সিঙ্গাপুরের প্রতি ১০ জনের একজন অন্তত একবার হলেও খাদ্য সংকটে পড়েছিলেন। এ ছাড়া, মাসে অন্তত একবার খাদ্য সংকটে পড়েছিলেন প্রতি ৫ জনের ২ জন। লজ্জায় অনেকে খাদ্য সহায়তা চাইতে পারেননি।
বিয়ন্ড সোশ্যাল সার্ভিসের উপনির্বাহী পরিচালক রঙ্গণাক্ষী থানগাভেলু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা হয়তো ধারণা করতে পারব না, লোকজন কত কম খাবার খাচ্ছেন। একবেলা খাবার সংগ্রহ করতে তাদের কত কষ্ট করতে হচ্ছে।’
খাদ্য সহায়তা গত বছর দ্য ফুড ব্যাংক সিঙ্গাপুরের ‘ফিড দ্য সিটি’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষকে খাবার সরবরাহ করেছিল।
খাদ্য সংকটে থাকা মানুষেরা যাতে নিয়মিত খাবার পেতে পারেন যে জন্যে সংস্থাটি ব্যাংক কার্ড সরবরাহ করেছে।
অপর একটি দাতব্য সংস্থা ‘ফুড ফ্রম দ্য হার্ট’ করোনার সময়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার প্যাকেট রেশন সরবরাহ করছে। এর চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সিম বি হিয়া বলেন, ‘আশঙ্কা করছি, মহামারির প্রভাব আরও অনেকদিন থেকে যাবে।… যতদিন প্রয়োজন ততদিন আমরা এই খাদ্য সহযোগিতা চালিয়ে যেতে চাই।’
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |