করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সন্তান জন্মদান উৎসাহিত করতে এককালীন অর্থ (বোনাস) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সিঙ্গাপুর। সরকারের আশঙ্কা মহামারির কারণে আর্থিক সংকট ও চাকরি হারানোয় চাপের মধ্যে থাকা নাগরিকেরা সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। আর সে কারণেই বিশেষ বোনাসের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বোনাস হিসেবে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে তা এখনও জানানো হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুনিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ সিঙ্গাপুরে জন্মহার পৃথিবীর সর্বনিম্ন। জন্মদানকে উৎসাহিত করতে আগে থেকেই কয়েক ধরণের বোনাস কর্মসূচি চালু রেখেছে সিঙ্গাপুর। গত করেক দশক থেকে জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটি। তবে করোনা মহামারির মধ্যে সেই উদ্যোগ থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার সিঙ্গাপুরের উপ প্রধানমন্ত্রী হেং সুই কিয়েট বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে সন্তান প্রত্যাশী কোনও কোনও দম্পতি কোভিড-১৯’র কারণে তাদের বাবা-মা হওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন।’ সেকারণে বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন এর পরিমাণ কতো হবে কিংবা কীভাবে তা দেওয়া হবে সেগুলো পররর্তী কোনও একদিন ঘোষণা করা হবে।
বর্তমানে যোগ্য পিতামাতাদের সন্তান নেওয়ার জন্য ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার পর্যন্ত বোনাস দিয়ে থাকে সিঙ্গাপুর। তারপরও ২০১৮ সালে দেশটির জন্মহার আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। তখন দেশটিতে জন্মহার দাঁড়ায় নারী প্রতি ১.১৪ সন্তান। বিবিসি জানিয়েছে, নতুন যে এককালীন অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আগের বোনাসগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে।
সিঙ্গাপুরের মতো একই সমস্যায় ভুগছে এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে জন্মহার কমে যাওয়ার সংকট করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে আরও বাড়তে পারে। এ বছরের শুরুতে চীনের জন্মহার গত ৭০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। বেইজিংয়ের সমালোচিত এক সন্তান নীতি বাদ দেওয়ার পরও দেশটিতে জন্মহার পড়তির দিকে রয়েছে।
তবে সিঙ্গাপুরের প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের সমস্যা ঠিক এর উল্টো। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরোপ করা চলাচলের বিধিনিষেধ যদি এই বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে ফিলিপাইনে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের পরিমাণ ২৬ লাখে গিয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল। গত মাসে ফিলিপাইনে সংস্থাটির মুখপাত্র আইমে সান্তোস বলেন, ‘এই সংখ্যা নিজেই একটি মহামারি।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ ফিলিপাইনের বর্তমান জনসংখ্যা দশ কোটি ৮৪ লাখের বেশি। এই অঞ্চলে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি দুর্গত দেশও ফিলিপাইন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজারের বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
গত মাসে ফিলিপাইনের সিনেটের নারী বিষয়ক কমিটির প্রধান রিসা হন্টিভেরোস বলেন, ‘এই মহামারির মধ্যে নারী ও শিশুদের এই ইস্যুগুলো মূলত অদৃশ্য হয়ে থেকেছে। এখন সেগুলোকে সামনে ও কেন্দ্রে রাখার সময়।’ ফিলিপাইনের করোনা বিরোধী টাস্কফোর্সে তিনি আরও বেশি নারী সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।