মরুভূমিতে বসবাস করা আর নরকে বসবাস করা একই কথা! সেই সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মাথার ওপর সূর্যের তাপ, যে তাপ সহ্য করার মতো না! জনমানবহীন বালুময় এ মরুভূমির আশপাশে সারাদিনে একজন লোকও আমার সামনে পড়ে না! যদিও মরুভূমিতে বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কোনো প্রাণীর যাতায়াত নেই। এই মরুভূমিতে থাকার কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা সবার নেই! মরুভূমির জীবনের কাহিনী শুনলে আপনারও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে। একদিন প্রচণ্ড পিপাসা পেয়েছিল। আমার আশপাশে কেউ নেই, পানিও নেই! প্রায় ১ কিলোমিটার হেঁটে পানির সন্ধান পেলাম। পানি পান করে আবার নিজের কর্মস্থলে আসতে আসতে আবার পিপাসা পেয়ে গেল, প্রচণ্ড গরমে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।
খাবার আজ আছে তো তিন দিন নেই! এই মরুভূমিতে আমার সঙ্গী হিসেবে আছে মরুভূমির জাহাজ নামে পরিচিত উট আর ছাগল! সারাদিন মাথার উপর সূর্যকে রেখে উট আর ছাগলের কাজ করে যাই নিয়মিত। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে যাই, রাতে তেমন একটা কাজ না থাকায় ঘুমাতে গেলে আর ঘুম আসে না আমার দুই চোখে! ভবিষ্যৎ কী আজও নিশ্চিত করতে পারিনি!
পরিবার-পরিজন আত্মীয়স্বজনের কথা ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে যায়, পৃথিবীর যত চিন্তা-ভাবনা সব কিছুই হল আমার একমাত্র সঙ্গী! মাঝে-মধ্যে বেশি ক্লান্ত হয়ে গেলে রাতে একটু ঘুমিয়ে যাই, তবে সেই ঘুমটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। মাঝে-মধ্যে খেয়ে ঘুমিয়ে যাই, নয়তো না খেয়ে! আগেই বলেছিলাম, খাবার একদিন আছে তো তিন দিন নেই।
এই মরুভূমিতে আমার থাকার কথা নয়! আমার সুখে থাকার কথা ছিল, যা বিদেশে আসার আগে দালাল আমাকে বলেছিল! দালালের কথামতো সুখের ঠিকানা খুঁজতে এসে এক অন্যরকম সুখ খুঁজে পেয়েছি! যে সুখের সঙ্গে আমরা অনেকে পরিচিত নই।
প্রবাসে এসে মা-বাবার সঙ্গে ভিডিওকলে কথা হয়নি প্রথম কয়েক মাস, একদিন বাড়িতে ইমুতে ভিডিওকল দিয়েছিলাম। আমার গর্ভধারিণী মায়েরও চিনতে কষ্ট হয়ে গেছে আমি যে তার গর্ভের সন্তান।
সবশেষে একটা কথা বলব- যারা প্রবাসে আসতে ইচ্ছুক তারা দয়া করে যাচাই-বাছাই করে আসবেন। নয়তো আমার মতো না খেয়ে, রোদে জ্বলে মরতে হবে।