২৫ জুনের পর বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি কমবে

কয়লা সংকটে গত সোমবার দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা বন্ধ হওয়ার পর লোডশেডিং তিন হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। তীব্র দাবদাহের মধ্যে এ কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায় বহুগুণ। এ অবস্থায় ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এসএস পাওয়ারও উৎপাদন শুরু করছে। এতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের ফলে বিদ্যুতের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা কিছুটা কমবে কিন্তু লোডশেডিং থামবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পায়রা থেকে দিনে গড়ে ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এটি বন্ধের পর বড় ঘাটতি দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ঘাটতি পূরণের জন্য ভারতের ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। আর বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৫০০ মেগাওয়াট। এর পাশাপাশি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগমী দুয়েক দিনের মধ্যে সবমিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে পারে। ফলে লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় হতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট চালু রয়েছে। প্রথম ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয় গত মার্চ মাসে। দিনে তারা গড়ে ৭৪০ মেগাওয়াট সরবরাহ করছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে আদানি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই কেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আর বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে (এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো থ্রির মালিকানাধীন) ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট আছে। প্রথমটিতে পরীক্ষামূলকভাবে এখন সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ পর এই কেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করবে। আগামী ২৫ জুন থেকে আবার উৎপাদনে ফিরতে পারে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়ে এক হাজার মেগাওয়াট হবে। এদিকে, বাঁশখালী কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১৩ জুন। তেলচালিত কেন্দ্রে আজ  থেকে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানো হবে। ফলে আজ থেকে পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে বলে আশাবাদী বিদ্যুৎ বিভাগ। চলতি মাসের ২৫ জুনের পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, জ্বালানির অভাবে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যে সক্ষমতা রয়েছে তার এক তৃতীয়াংশও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেও গ্যাসের ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। ডলার-সংকটে কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। পায়রা বন্ধ হয়ে গেছে কয়লার অভাবে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও কয়লাসংকটে অর্ধেক উৎপাদন করছে। ফার্নেস তেলচালিত ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ২৫ থেকে ২৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না এসব কেন্দ্র।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বুধবার জানান, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। বাঁশখালী থেকে ৫০০ মেগাওয়াট আসবে ১৩ জুন। তেলচালিত কেন্দ্রে আজ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানো হবে। আজ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ২৫ জুনের পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এদিকে, বুধবার মধ্যরাতে আদানির কেন্দ্র থেকে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে ঝড়ের কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরবরাহ। ফলে গতকাল বিকেল চারটায় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪১৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।