হতাশার ব্যাটিং, হোঁচট খেয়ে টাইগারদের এশিয়া কাপ শুরু

বড় লক্ষ্য নিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে গিয়ে হতাশার হারে টুর্নামেন্ট শুরু করলো বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেনি টাইগার ব্যাটাররা। বলতে গেলে একাই লড়ে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাকিরা যেন নিজেদের ছায়ায় ঢাকা পড়লেন। তাই দল পায়নি লড়াই করার মতো স্কোর। শ্রীলঙ্কার সামনে ১৬৫ রানের মামুলি টার্গেট দেয়া বড্ড বেমানান ছিল টাইগারদের জন্য। তাই স্বাগতিকরা হেসে খেলে ১১ ওভার হাতে রেখে পাঁচ উইকেটের সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

ক্যান্ডিতে টসে জিতে ব্যাট করতে নামার পর বাংলাদেশের হতাশার শুরুটা হয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। রানের খাতা খোলার আগেই দলীয় চার রানে সাজঘরে ফেরেন অভিষিক্ত ব্যাটার তানজিদ হাসান। মাহেশ থাকসেনার প্রথম বলে পড়েন অস্বস্তিতে। দ্বিতীয় বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁকা জায়গা দিয়ে পায়ে লাগায় এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন তানজিদ। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার নাঈম শেখ এ ম্যাচেই পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কে নেন ব্যক্তিগত সংগ্রহ, কিন্তু বড় করতে পারেননি সেটি। ২৩ বলে ১৬ রান করে ডি সিলভার বলে আউট হন তিনি। এগিয়ে এসে খেলতে গেলে ডি সিলভার স্লো হওয়া বল ব্যাটে ঠিকঠাক মতো লাগেনি, ক্যাচ যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো নিশাঙ্কার হাতে।

তিন নম্বরে খেলতে নেমে দলকে পথ দেখাতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। ১১ বলে পাঁচ রান করে পাথিরানার বাউন্সার কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান টাইগার দলপতি।

সাকিবের বিদায়ের পর ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন তাওহীদ হৃদয় ও শান্ত। যদিও জুটিতে শুরুতে যেভাবে রান আসছিল, পরে সেটিও তারা ধরে রাখতে পারেনি। প্রথম ১৪ বলে ১০ রান করা হৃদয় যখন আউট হন তখন তার নামের পাশে ৪১ বলে মাত্র ২০ রান। চাপে পড়ে যাওয়া এই ব্যাটার দাসুন শানাকার বলে এগিয়ে আসলে বল প্যাডে লাগে, আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় শ্রীলঙ্কা। ভেঙে যায় ৮০ বলে ৫৯ রানের জুটি।

এরপর সবাই আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলেও দলকে একাই টেনে নেন শান্ত। এদিকে, বাড়ছিল রান তোলার চাপও। মাঝে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ২২ বলে ১৩ রান করে আউট হন। এই ব্যাটার একবার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেও আম্পায়ার আউট দেননি, ততক্ষণে রিভিউ শেষ হয়ে গেছে লঙ্কানদের। তার আউটও ছিল হতাশার। পাথিরানার ওয়াইড হবে এমন বলে আপারকাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে দাঁড়ানো দিমুথ করুণারত্নের হাতে ক্যাচ দেন।

সাতে খেলতে নামা শেষ স্বীকৃত ব্যাটার মিরাজ ১১ বলে পাঁচ রান করে রান আউট হন। মিরাজ স্কয়ার লেগে বল পাঠালে রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা শান্ত। কিন্তু মিরাজ সামান্য বেরিয়ে আর নড়েননি। তার আগেই ক্রিজে পৌঁছানোয় আউট হননি শান্ত, মিরাজকে ফিরতে হয় সাজঘরে। আটে নামা মাহেদী ১৬ বলে ছয় রান করে এলবিডব্লিউ হন ওয়ালালগের বলে। সাত চারে ১২২ বলে ৮৯ রান করে নবম ব্যাটার হিসেবে মাহেশ থিকসেনার বলে বোল্ড হয়ে দলীয় ১৬২ রানে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। এরপর দুই রানের মধ্যেই বাকি দুজনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৬৪ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

১৬৪ রানে শ্রীলঙ্কাকে আটকানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বল করতে এসে লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নকে বোল্ড করলেন তাসকিন আহমেদ। দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। নিজের প্রথম ওভারে নয় রান দিলেও দ্বিতীয় ওভারে দলকে সাফল্যে এনে দেন শরিফুল।শরিফুলের বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন পাথুম নিশাঙ্কা। এক চারে ১৩ বলে ১৪ রান করেন নিশাঙ্কা। ১৫ রান তুলতেই দুই উইকেট খুইয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান শিবিরে এরপর আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে ২১ বলে পাঁচ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন কুশাল মেন্ডিস।

দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে সতর্কতার সাথে খেলতে থাকেন শ্রীলঙ্কান চারিথা আশালঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। তাদের জুটিতে উঠে ৭৮ রান। দলীয় ১২৮ রানে সামারাবিক্রমাকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মাহেদী। ৫৪ রানে থামেন সামারাবিক্রমা। এর পরের ওভারেই ফের সাকিবের আঘাত। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাত্র দুই রান করে সাজঘরে ফিরেন ধনাঞ্জয়া।

এরপর দলনেতা দাসুন শানাকাকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন চারিথ আশালাঙ্কা। অপরাজিত থাকেন ৬২ রানে। শানাকা অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে নেন তাসকিন, শরিফুল ও মাহেদী। অধিনায়ক সাকিবের শিকার দুই উইকেট।