ঘূর্ণিঝড় মোখা তাণ্ডব শুরু হয়েছে বঙ্গোপসাগরের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। রোববার দুপুর দুইটা থেকে প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া আর ভারী বৃষ্টি হচ্ছে সেখানে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দ্বীপের মাঝরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়ার অন্তত ৩৪০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। কয়েকশো গাছপালাও ভেঙে পড়েছে।
মোখার প্রভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে সেন্ট মার্টিনের উত্তরপাড়া, পশ্চিমপাড়া ও পূর্ব দিকের বেশক’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৩৭টির বেশি হোটেল রিসোর্ট ও কটেজে অবস্থান করছেন স্থানীয় প্রায় ছয় হাজার মানুষ, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার সকাল থেকে দ্বীপের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। তবে দুপুর দেড়টার পর থেকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা যায়। দুপুর দুইটার পর প্রবল গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত একইভাবে ঝড় বৃষ্টি হতে থাকে। ঝড়ের কবলে ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়েছে, গাছ পড়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০-১৫ জন। এরমধ্যে একজন নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ জানান, বিকেল তিনটার দিকে কোনারপাড়ার ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সময় বড় একটি গাছ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়লে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন ওই নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে নিয়ে যান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রধান সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, সেন্ট মার্টিনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব চলছে। ঝোড়ো হাওয়ায় সেখানকার ৩০০-৪০০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে পড়েছে। গাছচাপায় একজন নারীর আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তিনি আরও বলেন, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং এলাকাতে বেশকিছু গাছপালা ভেঙেছে। সেখানে ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেন্ট মার্টিনে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দ্বীপের লোকজনের ঘরবাড়ি, গাছ পালা ভেঙে যাচ্ছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ২০-২৫টি নারিকেল গাছ উপড়ে পড়েছে। আতঙ্কে লোকজন ছোটাছুটি করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি মো. আবদুল হালিম জানিয়েছেন, দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে। ঘরবাড়ি গাছপালা ভেঙে পড়েছে। দ্বীপের প্রায় সব লোকজনকে আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। দ্বীপের লোকসংখ্যা ১০ হাজার ৭০০ জন। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার আগেভাগে টেকনাফ চলে গেছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ খান জানান, আজ দুপুরে ঘূর্ণিঝড় মোখা তীব্র গতিতে আঘাত হেনেছে। সাগরে জোয়ারের পানিও বাড়ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিম সৈকতের ২০-২৫টি হোটেল–রিসোর্টসহ লোকজনের কিছু ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। রাতের প্লাবনে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর মতো টেকসই বেড়িবাঁধ সেন্ট মার্টিনে নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।