সুন্দরবনে বন্যপশু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার

সুন্দরবনে বাঘ এবং কুমিরের আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা আর গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

শাহাব উদ্দিন বলেন, সুন্দরবন এবং ব‌নের বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ, আমা‌দের অহঙ্কার। সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে বাড়ানো হচ্ছে। বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা, পাচার ও এ সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদানকারীকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়।

সরকার সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং এই পোর্টা‌লের মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়া গেছে জা‌নি‌য়ে মন্ত্রী ব‌লেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৯৮ জন অপরাধিকে আটক এবং ১১৬৯টি ট্রলার বা জলযান জব্দ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে বিষ রাসায়নিক প্রয়োগে মাছ ধরার অভিযোগে ৮২ জন আসামিকে আটকসহ ১৭৩ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে ৭৩টি বন মামলা হয়েছে। এ সময়ে হরিণ শিকারের অভিযোগে ৭৭ জন আসামিকে আটকসহ ১৯৯ জন আসামির বিরুদ্ধে ৫৪টি বন মামলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সুন্দরবনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সুপেয় পানীয় জল সরবরাহের জন্য ৪টি নতুন পুকুর খনন এবং ৮৪টি বিদ্যমান পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে বন বিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্প, স্টেশন, রেঞ্জে অকেজো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। সহব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, ইকোলজিক্যাল মনিটরিংয়ের ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত এবং টহলের জন্য জলযান ক্রয় করা হচ্ছে। ইকোটুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে কাজ চলমান আছে।

বর্তমানে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার মোট ২৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, বিজ্ঞান ভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা, ও উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেস্টনী তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সুন্দরবনের অধিকতর টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে সুন্দরবনের ভূমি ও সামুদ্রিক ব্যবস্থার বাস্তুসংস্থান উন্নয়নে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও গবেষণা পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকায় ভবিষ্যতের সমস্ত শিল্প কারখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ কালে সুন্দরবনের ওপর প্রভাব মূল্যায়নে বিশেষভাবে ডলফিন সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় মোট ৬টি ডলফিন অভয়ারণ্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে ব‌লেও জানান পরিবেশমন্ত্রী।

এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রণালয় ও বন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।