দেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয় বিকেল চারটায়। বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোট শেষ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগরীর ভোটাররা।
সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তাদের মধ্যে উৎসাহ–উদ্দীপনাও ছিল বেশ। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ দেখা গেছে। তবে দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি।
এবারের ভোট নিয়ে প্রার্থী কিংবা তাদের এজেন্টরা কেউ ভোট গ্রহণে অনিয়মের কোনো অভিযোগ তোলেননি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টসহ অনেক স্থানে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টও ছিলেন। তবে অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের খুব কম দেখা গেছে।
নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু হলেও ইভিএমে ভোট দিতে দেরি হওয়ায় ভোট গ্রহণ কিছুটা ধীরগতিতে এগিয়েছে বলে জানান ভোটাররা। তাই অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অবশ্য ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাও বলেছেন ভোটাররা। অনেকেই ইভিএম এ দ্রুত ভোট দিতে পেরেছেন। ছোট দেওড়া কেন্দ্রে ভোটার শেখ কামাল বলেন, তার ভোট দিতে ১০ সেকেন্ডের বেশি লাগেনি। হোসনে আরা নামে আরেক ভোটার বলেন, তিনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেখানে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে হাজিরা দেন। ফলে ইভিএমে তার কোনো সমস্যাই হয়নি।
আজকের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় গোপন বুথে প্রবেশের অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট দেখার সেময় এমন অনিয়ম চোখে পড়ার জড়িত দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। এরপর একজনকে আটক এবং অন্যজনকে তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের বাসনের ১০১ নম্বর সোনারবান মেমোরিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ এবং গাজীপুর সিটির বি ব্লকের ১০৩ নম্বর উম্মুল কুরা হিফজ মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে মো. আবু তাহেরকে আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গাজীপুর সিটির নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের একজনকে বিকেলে ছেড়ে দেওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর অপরজনের তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনে সালনার নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের প্রবেশমুখে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে কোনও প্রভাব পড়েনি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান সকাল নয়টার দিকে নিজ ওয়ার্ড ৫৭ নম্বরের টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসায় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের জয় নৌকার, নৌকারই হবে। গাজীপুরকে একটি দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গঠনে মানুষের যে প্রত্যয়, তা নৌকার জয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।’
আজমত উল্লা আরও বলেন, নির্বাচনে যে ফলাফলই আসুক না কেন, তিনি সেটা মেনে নেবেন। জনরায়ই তার কাছে মূল বিষয়।
নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এবং তার ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। জায়েদা খাতুনের নির্বাচন কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিকেল চারটা পর্যন্তই যেন ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়। কোনোভাবেই যেন সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইভিএম মেশিন টেম্পারিং করা না হয়।
সকাল ১০টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও জাহাঙ্গীর আলম সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাদের ভোট দেন।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনুর ইসলাম নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ শেষ সময় পর্যন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে যে ফলই আসুক, তা মেনে নেব।’
গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।