শরীরে গুলির স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াবেন রাবি শিক্ষার্থীরা!

‘সংঘর্ষের দিন ২৮টি গুলির স্প্লিন্টার আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্ধ হয়। কিন্তু ঘটনার পাঁচ দিনেও শরীর থেকে এগুলো করেনি চিকিৎসক। তাহলে কি এই স্প্লিন্টারগুলো শরীরে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে? এগুলো কি অপসারণ করার কোনও উপায় নেই?’

এভাবেই নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যত আর হতাশার কথা বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী। গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৮টি গুলির স্প্লিন্টার তার শরীরে বিদ্ধ হয়।

ওই ঘটনায় এমন ৬০ জনের অধিক শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় বলে জানিয়েছেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. তারেক নূর। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সবাইকে। অনেকের শরীরে শতাধিক গুলির স্প্লিন্টার ঢুকেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

তবে অধিকাংশ স্প্লিন্টার শরীর থেকে বের করা যাবে না বলছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, যেসব গুলির স্প্লিন্টার শরীরের গভীরে প্রবেশ করেছে সেগুলো বের করা যাবে না। তাছাড়া সবার শরীরে ৩০টির বেশি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। একজনের শরীরে এত জায়গায় কাটাছেঁড়া করলে দেহের কোষের ক্ষতি হবে। তবে যে স্প্লিন্টার বের করা সম্ভব, সেগুলো আমরা বের করে দিচ্ছি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শতাধিক গুলির স্প্লিন্টার নিয়ে এখনো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন মশিউর রহমান ওরফে মিহাদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শরীরে স্প্লিন্টার ঢুকে তার পাচকতন্ত্র ছিদ্র হয়ে গেছে। গত রোববার চার ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করা হয় মিহাদের। তার এক্স-রে ফিল্মে ১০৭টির বেশি স্প্লিন্টারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

আহত মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের উপর কেন গুলি ছোড়া হলো? শরীরটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে কীভাবে মায়ের সামনে যাব। পুলিশ কীভাবে আমাদের ওপর হামলার অনুমতি পায়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ড. তবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের শরীরের স্প্লিন্টার নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর ফোলা কমে গেলে সার্জারির মাধ্যমে বের করা যাবে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ. এম. শামীম আহাম্মদ বলেন, শরীরের স্প্লিন্টার থাকলে সমস্যা হবে না। কিন্তু স্প্লিন্টার অপারেশন করে বের করতে গেলে আরও বেশি সমস্যা হবে।