‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শনিবার ক্যাম্পাসের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনে প্রকৌশল অনুষদ গ্যালারিতে সেমিনার আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, কি-নোট সেশন, টেকনিক্যাল সেশন এবং উন্মুক্ত আলোচনাসহ মোট চারটি পর্ব ছিল সেমিনারে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা কার্যকরি করে তুলতে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা এই সেমিনারের অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীরা একই প্লাটফর্মে মিলিত হোন, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সুলতান-উল-ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মো. হুমায়ুন কবীর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (আরআই) ড. মো. আকিব হোসেন এবং রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সহ-সভাপতি সুলতানুল মাহমুদ।
প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু জাফর মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম আছে। পিএইচডি করে তারা বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তেমন কোনও কাজে আসছে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে সে অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার ওপর তিনি জোর দেন। দেশে গবেষণার সংস্কৃতি তৈরি করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেই সুযোগ না থাকার কারণে তারা বিদেশে চলে যায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণায় আরও মনোযোগী হতে পরামর্শ দেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে গবেষণার আরও সুযোগ দেওয়ার জন্যও বলেন তিনি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মোকাবেলা করার জন্যও সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান ড. জাফর ইকবাল।
সেমিনারে উপ উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সুলতান-উল ইসলাম বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো সিজিপিএ নিয়ে বের হলেও তাদের অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার সুযোগ করে না দেওয়ার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছে। কারণ বিদেশে তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারে। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, শোষণহীন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
উপ- উপাচার্য (শিক্ষা) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করছি, তা যথাযোগ্যভাবে প্রয়োগ করতে পারছি না। বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে যেতে হবে। সেই জন্য আমাদের উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার বিষয়েও তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে ড. মো আকিব হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রয়োজনের ৯৮% ওষুধ আমরা উৎপাদন করছি, ২% আমদানি করছি। এটা আমাদের ওষুধ শিল্পের জন্য সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পের প্রসারতা বাড়াতে পারে। ওষুধ শিল্পের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক প্রয়োজনের তুলনায় কম। এই সম্পর্ক বাড়াতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। গজারিয়ায় ওষুধ শিল্প পার্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গিয়ে গবেষণা করে ওষুধ শিল্পের প্রসারতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে কি-নোট সেশনে বক্তব্য দেন বুয়েটের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (রাইজ)-এর পরিচালক অধ্যাপক মুহম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী তাপস কুমার মজুমদার।
সেমিনারের তৃতীয় পর্বে টেকনিক্যাল সেশনে টেকনিক্যাল বক্তৃতা করেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের এ্যালামনাই সদস্য ও সিইএম ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামায়েল উল্লাহ, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ্যালামনাই সদস্য এবং স্কাইলার্ক সফ্ট লিমিটেড, ঢাকা-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বি এম শরিফুল ইসলাম, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ্যালামনাই সদস্য এবং ইজিটপ আনলিমিটেড কোম্পানি ট/এ ডিং, ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড-এর সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বাধন কুমার জৈন এবং ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ্যালমনাই সদস্য এবং কেমিকেয়ার ল্যাবটেরিজ, রাজশাহী-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মো. মাযহারুল ইসলাম।
দেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৫৭ জন শিক্ষক, ১০০ জন শিক্ষার্থী, ২৫ জন এ্যালামনাই, এবং ২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক ও প্রতিনিধিগণ সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা বিনতে সুফী ও শেখ খালেদ মোস্তাক।