আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা নিয়ে বুধবার পাঁচ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকে ২১টি গাইড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মানতে হবে এ গাইডলাইন। তবে এর সবই পর্যবেক্ষকদের সহায়ক বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন, এনবিআর, তথ্য ও সম্প্রচারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে মূলত বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মতামত নেয় ইসি। বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা ‘যুগোপযোগী’ করার পাশাপাশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের যন্ত্রপাতি আনা ও কর অব্যাহতির বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
বুধবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতিমালা প্রসঙ্গে অশোক কুমার বলেন, এ নিয়ে সামনে আরও বসা হবে। এরপর খসড়া কমিশন অনুমোদন করবে। যা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চূড়ান্ত হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বুধবারের সভায় ভোট পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিদের আবেদন সীমা, প্রয়োজনীয় কারিগরি সুযোগ-সুবিধা ও প্রাক নির্বাচনী একটি প্রতিনিধি দলের সুপারিশ পর্যালোচনা করে নীতিমালা হালনাগাদের বিষয় আলোচনা করা হয়। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রাক অনুসন্ধানী প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অক্টোবরে আসবে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ দল।
এদিকে, আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর ‘যত খুশি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’ পাঠানোকে স্বাগত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি বলছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদনগুলো এলে সুবিধা হয়। কারণ, আরও কিছু ফরমালিটিজ রয়েছে। এখানে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্সের বিষয় রয়েছে। নিরপেক্ষ অবজারভার পাঠালে, যত সংখ্যক ইচ্ছে পাঠাতে পারে। এতে কমিশনের কোনও আপত্তি নেই।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশি পর্যবেক্ষককে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত নির্বাচন পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ ও দশম সংসদ নির্বাচনে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। সেই দুটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল তারা।একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। এছাড়া, ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত) বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা, দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।
অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় পর্যবেক্ষকও কম ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ওই নির্বাচনে মাত্র ৪ জন বিদেশি এবং স্থানীয় ৩৫টি সংস্থার ৮ হাজার ৮৭৪ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।
এছাড়া ২০০৮ সালে ৫৯৩ জন বিদেশি এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন দেশি, ২০০১ সালে ২২৫ জন বিদেশি এবং ২ লাখ ১৮ হাজার জন দেশি, ১৯৯৬ সালে প্রায় ৪০ হাজার দেশি এবং ২৬৫ জন বিদেশি, ১৯৯১ সালে ৩০ হাজার দেশি এবং ৫৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।