মাদারীপুরে দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মাদারীপুরে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারী মিজানুর রহমান ফকিরের (৫৩) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ফকির জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি মাদারীপুর পৌরসভার পাঠককান্দি এলাকার কিনাই ফকিরের ছেলে। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে মিজানুর রহমান ফকিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। বিষয়টি আমলে নিয়ে তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেন দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক সৌরভ দাস। প্রাথমিকভাবে মিজানুর রহমান ফকিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ পাঠানো হয়। তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর নোটিশ পর্যালোচনা করেন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান।

দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিজানুর রহমান ফকির দুর্নীতি দমন কমিশনে তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২ টাকা মূল্যের সম্পদের হিসাব গোপন করেছেন এবং ৩০ লাখ ১২ হাজার ৩৫৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দখলে রেখেছেন যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারা ও ২৭(১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এসব কারণে মিজানুর রহমান ফকিরের বিরুদ্ধে ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে চলতি মাসের আট তারিখ মামলা দায়ের করার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বৃহস্পতিবার সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার বাদী ও দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে মিজানুর রহমান ফকিরের সম্পদ অনুসন্ধান করে দেখা যায় তিনি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব তথ্য ও প্রমাণ হাতে পেয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত শেষে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। 

এদিকে, দুদকের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিজানুর রহমান ফকির। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার কোনও অবৈধ সম্পদ নেই। দুদক আমাকে নোটিশ পাঠালে আমি আমার সম্পদের বিবরণী তাদের কাছে জমা দিয়েছিলাম। তারপর কীভাবে তারা মামলা করলো তা বলতে পারিনা। এ বিষয় আমার কোনও ধারণা নেই। তবে আমার ধারণা তারা আমাকে ফাঁসাতে এ মামলা দিয়েছে।’

জেলা প্রশাসকের মুখপাত্র ও মাদারীপুর স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মিজানুর রহমান ফকিরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দায়েরের বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে দুদক অফিস থেকে আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র পাঠানো হয়নি। তাছাড়া দুদকের মামলায় ওই কর্মচারী যদি অভিযুক্ত হয় তাহলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

সাময়িক বরখাস্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দুদক থেকে নথিপত্র পাওয়ার পরে আমরা এই বিষয়টি পর্যালোচনা করে সরকারি চাকরির যে আইন ও বিধি রয়েছে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।