মাদারীপুরের রাজনীতি আ’লীগের নিয়ন্ত্রণে, তৎপর অন্যরাও

ভাটিবঙ্গের ছোট্ট একটি জনপদ মাদারীপুর জেলা। এই জেলা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই ধারাবাহিকভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন এখানে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলে জেলায় ৪টি উপজেলা নিয়ে ৩টি সংসদীয় আসন করা হয়। বর্তমানে ডাসার নামে নতুন উপজেলা হওয়ার পরও ৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে।

এখানে সংসদীয় আসন-১ শিবচরের বর্তমান সংসদের চিফ হুইফ নুর-ই আলম চৌধুরী। তিনিএই নির্বাচনী আসনের সর্বেসর্বা। সংসদীয় আসন-২ মাদারীপুর সদর (একাংশ) ও রাজৈরে বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। অন্যদিকে, কালকিনি ও সদর (একাংশ) বর্তমান আওয়ামী  লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত।

এছাড়াও এখানে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমও প্রাক্তন এমপি ছিলেন। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি এবং অন্যটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এছাড়াও কালকিনি আওয়ামী লীগের ৩টি ভাগ রয়েছে। এরমধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দলের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের গ্রুপ রয়েছে।

নুর-ই আলম চৌধুরী ও আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় এবং শাজাহান খানের বাবা মৌলভী আছমত আলী খান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর হওয়ায় মাদারীপুরে রাজনীতিতে তারা বরাবরই দলের মূল্যায়ন পেয়েছেন।

মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, আওয়ামী লীগের কোনও গ্রুপিং নেই। আগামী নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। মাদারীপুর-১ আসন শিবচরে জাতীয় সংসদের চিফ হুইফ ব্যতীত অন্য কেউ মনোনয়ন চাইবে বলে আমার জানা নেই। মাদারীপুর-২ ও ৩ আসনে দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এরা হচ্ছেন দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ আরও কয়েকজন। উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছে আমরা তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে নভেম্বরে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৫টি উপজেলার ৪টিতে আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ১৯৯৬ সালের পর থেকে শুধুমাত্র রাজৈর উপজেলা কমিটি গঠন করতে পারিনি। স্থানীয় সাংসদের প্রভাব বিস্তারের কারণে আওয়ামী লীগ কোন ব্যক্তিগত কমিটি করেনা। বর্তমান কমিটি বিষয়ে আমরা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে একাধিকবার লিখিতভাবে বলেছি এবং তাগিদ দিয়েছি। তিনি বলেছেন দলীয় সভাপতি যখন সময় দিবেন তখন আপনাদের সম্মেলন হবে। দল যেটা বলবে তার বাইরে আমরা কিছুই করতে পারি না।

মাদারীপুরের রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি বলেন, মাদারীপুরের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই ভালো। এখানে দীর্ঘদিন যাবত ৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করছেন। দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবেই। যে প্রতিযোগিতায় হারে সেই গ্রুপিং করে। অতএব গ্রুপিং থাকবেই। জনগণ যাদের পছন্দ করবে তারাই জয়লাভ করবে।

অন্যদিকে, জেলা বিএনপির নাম সর্বস্ব আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও রয়েছে দলের মধ্যে বিভক্তি। ৩০ বছর যাবত দলীয় কোনও অফিস নেই, নেই তেমন কোনও কার্যক্রম। মাঝে মাঝে গোপনে কার্যক্রম করলেও তাতে কোন্দল রয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট জামিনুর হোসেন মিঠু বলেন, আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দলের অঙ্গসংগঠন এবং তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি। কমিটিগুলোতে যে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা দেখছি। যেখানে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সেখানে পুনরায় কাজ করার চেষ্টা করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলকে শক্তিশালী করতে পারি সেই জন্য কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, সকল বড় দলের মধ্যেই মতপার্থক্য রয়েছে। আমাদের মাদারীপুরে দলের ৩টি বিভক্তি রয়েছে। একটি ভাগে আমি নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছি, আরেকটি ভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাজী হুমায়ন কবিরসহ অন্যরা এবং আরেকটি ভাগে নেৃতত্ব দিচ্ছেন জাহান্দার আলী জাহান। আমরা নেতৃত্ব যে যেখানেই দিই না কেন আমরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন যেন হয় সে দাবিতে আমরা মাঠে থাকবো। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।

মিঠু বলেন, দলীয় কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের বাধাবিপত্তির মুখে পড়তে হয়। মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের কোন নেতা বা অন্যরা আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করে না। আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করে পুলিশ বাহিনী। পুলিশ যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে তাহলে আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে আশাবাদী তিনি।

এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটি থাকলেও কার্যক্রম নেই বললেই চলে। জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, আমরা ১৪ দলীয় জোট করি। জেলা উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। আপাতত আমাদের অফিস নাই। আমরা সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। আমাদের কার্যক্রম গতানুগতিক। কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব লিয়াকত খান বলেন, মাদারীপুরে জাতীয় পার্টি খুব শক্তিশালী একটি সংগঠন। ইদানিং আমরা ওয়ার্ড কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি এবং জেলা কমিটি করেছি। জেলা কমিটির খুব শীঘ্রই কাউন্সিল করব এবং প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও প্রত্যেকটি থানায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাদারীপুরে রাজনীতিতে আমাদের কোন বাধা বিপত্তি নেই। দলের মধ্যে কোন আন্ত:কোন্দল নেই। আমরা সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি। এগুলো নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। নিত্যপণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করছি। আমাদের কার্যক্রম বেশ ভালভাবে চলছে। আমাদের জেলা কার্যালয় রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর ৩টি আসনেই আমরা মনোনয়ন প্রত্যাশী।