শ্রম অধিদপ্তর ঘোষিত নৌযান শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির স্থগিত করে নতুন মজুরি কাঠামা নির্ধারণসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা। এছাড়াও রাজধানীর গুলিস্তানের জিপিও মোড় থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক হকার-যানজট মুক্ত রাখার দাবিও জানিয়েছে তারা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার সদরঘাটে সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নির্ধারণের জন্য শ্রম অধিদপ্তরের আহ্বানে লঞ্চ ব্যবসার মন্দা অবস্থার কথা বিবেচনা করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি মজুরি কাঠামোর প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। এর আগে আগত বছরের ১৪ ডিসেম্বর, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ও ৯ ফেব্রুয়ারি শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মজুরি স্কেল পুনঃনির্ধারণ প্রস্তাবনা কমিটির চতুর্থ সভার সিদ্ধান্তকে পাস কাটিয়ে ৬০% মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সর্বশেষ বিগত ২৬ ফেব্রুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বরারব আরও একটি আবেদন করা হয়। আবেদনে ৬০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে আলোচনা সাপেক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য মজুরি কাঠামো নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, অনুরোধ করা হলেও শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তর এসব প্রস্তাবনা ও সমস্যাগুলো আমলে না নিয়ে এবং বেতন-ভাতা প্রদানে মালিকদের সক্ষমতা যাচাই না করে একতরফাভাবে ৬০ শতাংশ মজুরি বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। যা বর্তমান লঞ্চ ব্যবসার বাস্তবতার সঙ্গে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সদ্য ঘোষিত মজুরি কাঠামো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক অগ্রহণযোগ্য বলেও তারা দাবি করেন তিনি।
এসময় চার দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলোঃ
১. শ্রম অধিদপ্তরের গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত গেজেটে নৌযান শ্রমিকদের জন্য ৬০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির কার্যকারিতা স্থগিত করে এই মজুরি প্রদানের সক্ষমতা মালিকদের আছে কিনা- তা যাচাই বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন ও শ্রেণি বিন্যাস করে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা।
২. যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে জিপিও মোড় থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ হকার ও মানজটমুক্ত রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের যাত্রীদের ঢাকা নদী বন্দরে যাতায়াতের সুবিধার্থে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার বা উড়াল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেতুর একটি শাখা সদরঘাট থেকে বাবুবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু ও আরেকটি শাখা পোস্তগোলা শশ্মানঘাট পর্যন্ত বর্ধিত করা
৪. লঞ্চ মালিকগণ জ্বালানি তেল ব্যবহার করে নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এসি চালানোয় লঞ্চের কেবিনে ব্যবহৃত এসির ওপর ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার করা।
এর আগে, ২০১৬ সালে নৌযান শ্রমিকদের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী মজুরি কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পাঁচ বছর না যেতেই শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি ও খাদ্যভাতার নামে আন্দোলন ও লঞ্চ ধর্মঘট করলে ২০২০ সালে জনপ্রতি মাসিক ১,০০০ টাকা খাদ্যভাতা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারীর কারণে মজুরি কাঠামো করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু শ্রমিকরা পুনরায় মহার্ঘ্য ভাতার জন্য আন্দোলন শুরু করলে ২০২২ সালে ১,২০০ টাকা মহার্ঘ্য ভাতা নির্ধারণ করা হয়।