বাংলাদেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন বলে আজ ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আছে। তিনি বেঁচে আছেন বলেই করোনাকালে সারাবিশ্ব যখন হুমকিতে পড়েছিল, বাংলাদেশ তখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বিনা পয়সায় তিনি এদেশের কোটি কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। অর্থনৈতিক মন্দা যখন সারা বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলেছে তখনও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, আজকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারাবিশ্ব যখন হুমকিতে পড়েছে তখনও তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এই কাজগুলোর জন্য মহান রাব্বুল আলামিন তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আমু বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থই শেখ হাসিনার স্বার্থ। সেজন্য এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থে আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনার বিজয় ত্বরান্বিত করতে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতোই ঝাঁপিয়ে পড়বেন।’
হঠাৎ করে নয় বরং বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সাধনা, পরিকল্পনা ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘হঠাৎ করে স্বাধীনতা আসেনি। হঠাৎ করে রাষ্ট্র পাননি। হঠাৎ করে ভারতের সাহায্য আসেনি। আমরা যখন ভারত গিয়েছিলাম- আমাদের থাকা, খাওয়া, আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, সবকিছু আমরা রেডিমেড পেয়েছিলাম। তার কারণ, আগে থাকতেই ওটা বঙ্গবন্ধু ব্যবস্থা করেছিলেন। আমাদের বাহিনীর মূল নেতা ছিলেন শেখ মুজিব। তিনি এগুলো আগে থেকেই ব্যবস্থা করেছিলেন। যার জন্য প্রত্যেকটি জায়গায় আমাদের ক্যাম্প ছিল, আমরা সবকিছু পেয়েছিলাম। আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘আপনাদের যে অবদান তার তুলনায় আমাদের কোনও প্রয়াসই যথাযথ নয়। তারপরও আমরা এই ক্ষুদ্র আয়োজন করে চলেছি। ইনশাআল্লাহ, প্রতিবছরই আমরা এই আয়োজন করব। এই আয়োজনের মাধ্যমে আপনাদের কাছে পেয়ে, আপনাদের সান্নিধ্য পেয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপ্লুত হই। আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির সান্নিধ্য আমি পাইনি। কিন্তু আপনাদের সান্নিধ্য পেয়ে আমি পিতার সান্নিধ্য পাই। তাই আপনারা এই বয়সেও এত কষ্ট করে আসেন, এতে আমি উপলব্ধি করি- আপনাদের ভালবাসা, আমার প্রতি আপনাদের আবেগ। সেজন্য আমি আপনাদেরকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।’
মুক্তিযোদ্ধাদের পৌর কর মওকুফে নিজ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সম্মানিত করে চলেছেন তার সঙ্গে আবাসস্থলেরও ব্যবস্থা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রয়াসকে বেগবান করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব আবাসস্থল আছে, বাড়ি আছে, সেখানে পৌর করের (হোল্ডিং ট্যাক্স) যে বিষয় রয়েছে, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি এটুকু বলবো, আইনের আওতায় একজন মেয়রের যেটুকু ক্ষমতা আছে সেটুকুর পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, যতটা পারি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌর কর মওকুফ করে দেব।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংগীত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী-প্রশিক্ষণার্থীরা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য জিন্নাতুল বাকিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন হেলাল বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বসবাসকারী ১ হাজার ২৪৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদেরকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।