বিসিবির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে বগুড়াবাসীর প্রতিবাদ

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে বিসিবির লোকবলসহ মালামাল গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন বগুড়াবাসী। দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবারও দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে শহরের সাতমাথায় ‘বগুড়াবাসী’র ব্যানারে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

এতে বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গণের সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় তিনশতাধিক মানুষ অংশ নেয়।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ক্রিড়া সংগঠক মুকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে স্টেডিয়াম থেকে বিসিবির কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হটকারী এক সিদ্ধান্ত। বিসিবির হাস্যকর এই সিদ্ধান্ত বগুড়ারবাসীর জন্য লজ্জার। বগুড়া থেকে মুশফিকুর রহিম, শফিউল সুহাস, তৌহিদ হৃদয়, তামিমের মতো খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে সেই বগুড়ার চান্দু স্টেডিয়ামের প্রতি শুরু থেকে বিসিবির বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। বগুড়ার স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক যেকোনো ভেন্যুর মতোই মানসম্মত। যদি অবিলম্বে বগুড়ার চান্দু স্টেডিয়ামে বিসিবি তাদের কার্যক্রমসহ আন্তজার্তিক ভেন্যু চালু না করে তাহলে লংমার্চ করা হবে। দ্রুতই এই ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক খেলা বিসিবিকেই ফিরিয়ে দিতে হবে।’

ক্রিড়া সংগঠক কে এম মাহবুব জিয়নের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্যে রাখেন বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, ব্যবসায়ী নেতা পরিমল প্রসাদ রাজ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়, জেলা ক্রিকেটার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ প্রমুখ।

এরআগে দুপুর একটার দিকে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে অংশ নেওয়া বগুড়া স্পোর্টস জন ও মেঘদ্বীপ ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড়র ও আম্পায়াররা মাঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।  এছাড়াও শুক্রবার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের সামনে এআরসি স্পোর্টিং ক্লাব মানববন্ধর করে। এ সময় স্টেডিয়াম সংলগ্ন খান্দার-মালগ্রামের বাসিন্দারা অংশ নেন।

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে বিসিবির লোকবলসহ মালামাল গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে। নানারকম হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা প্রবিতাদ জানাচ্ছেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার বিসিবি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ এনে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে লোকবলসহ মালামাল প্রত্যাহার করে নেয়।

দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হওয়ায় স্টেডিয়ামের সবগুলো গ্যালারিতে শ্যাওলা জমেছে । দর্শকের শাড়িতে থাকা প্লাস্টিক চেয়ারগুলোয় ফাটল ধরেছে। ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে ২১ কোটি টাকায় বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে (ফ্লাড-লাইটসহ) উন্নীত করা হয়। স্টেডিয়ামে চার টাওয়ারে ১০০টি করে মোট ৪০০ ফ্লাড-লাইট রয়েছে। এই লাইটগুলো আট লাখ ওয়াট বিদ্যুতের আলো সরবরাহ করতে পারে। আন্তর্জাতিক খেলা বন্ধের পরে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার ফ্লাডলাইটগুলো জ্বালানো হয়েছিল। এরপর সেগুলো আর জ্বলেনি।
২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়। এই মাঠে ভালো মানের পাঁচটি উইকেট রয়েছে।

কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকে এ মাঠে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে কোনও খেলা উপভোগ করা দর্শকদের ভাগ্যে জোটেনি।
তবে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় লিগ, স্থানীয় প্রিমিয়ার ডিভিশন, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ ও করপোরেট লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে।