বিদেশে ভুট্টা রপ্তানির স্বপ্ন নওগাঁর চাষীদের

অল্প সময়ে চাষ করা যায়, বেশি পুঁজিও বিনিয়োগ করতে হয়না কিন্তু লাভের অংকটা বড়। তাই ভুট্টা চাষে নওগাঁর কৃষকরা বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছেন। ক্ষেতে ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে ফুল ও ভুট্টার মোচা। সেই সাথে চাষীদের মুখেও ফুটেছে হাসি। চাষীদের স্বপ্ন একদিন নওগাঁর ভুট্টা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশেও রপ্তানি হবে। সব ধরনের আবাদি জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। একই জমিতে আলু, টমেটো বা অন্য ধরনের সবজি চাষেও বাড়তি অর্থ পাচ্ছেন চাষীরা।

নওগাঁ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ছয় হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক ভুট্টা চাষের পরিমাণ হলো ,সদর উপজেলায় ১৯০ হেক্টর, মান্দায় ৭০০ হেক্টর, রানীনগরে ৭৩০ হেক্টর, আত্রাইয়ে তিন হাজার ৮০০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১৩০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২৯০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৬০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৩২০ হেক্টর, সাপাহারে ৫০ হেক্টর, পোরশায় ১০ হেক্টর ও নিয়ামতপুরে ৩০ হেক্টর।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বিঘা ভুট্টার জমি তৈরি বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৩ হাজার টাকা লাভ হয়।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন ভুট্টা ক্ষেতগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষীরা। গাছগুলো হাঁটু সমান আর অঞ্চলভেদে কিছু এলাকায় আগাম ভুট্টা রোপণ করায় গাছ মানুষের উচ্চতাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং কোথাও কোথাও গাছে মোচা এসেছে। এসব ভূট্টা আগাম ক্ষেত থেকে তোলা যাবে।

জেলার বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউপির বিষ্ণুপুর গ্রামের হাছান আলী বলেন, বোরো চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি অথচ যখন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয় তখন ধানের বাজারে ধস নামে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই উঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম, দামও বেশি থাকে বলেই আমি ভুট্টা চাষ করেছি।

উপাজেলার কাষ্টগাড়ী গ্রামের চাষী শাহ্ আলম জানান, আমি ৬০ শতাংশ জমিতে ভূট্টা চাষ করেছি। ভূট্টার পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আলু চাষ করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে আলু তোলা শুরু করব। আশা করছি ভূট্টার ফলনও সন্তোষজনক হবে।

সাগরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। দামও ভালো পাওয়া যায়। একটু দেরিতে বিক্রি করলে মণে দুই থেকে তিনশো টাকা বেশি পাওয়া যায়।

নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলায়  এবার ছয় হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার মেট্টিকটন।  ইতোমধ্যে ছয় হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। মাঠের কিছু জমিতে এখনো আলু রয়েছে। আলু তোলার পর জমিগুলোতেও ভুট্টা রোপন করা হবে। আমরা আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি জমিতে ভট্টার চাষ হবে। ভালো ফলন পেতে মাঠ পর্যায়ে আমাদের উপ সহকারী কৃষি আফিসার সর্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।