স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবিশ মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজেউন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর শুক্রবার (১৪ জুলাই) ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ভাতিজি অভিনেত্রী জয়ীতা মহলানবীশ। তিনি তার ফুফুর বিদেহী আত্মার জন্য দেশবাসীর কাছে প্রার্থনা কামনা করেন।
বুলবুল মহলানবিশ একাধারে কবি ও লেখক সংগীতজ্ঞ এবং নাট্যজন। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন এই শব্দ যোদ্ধা। পাশাপাশি টেলিভিশন-বেতার-মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন তিনি।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে সেই সময়কার রেসকোর্স ময়দানে যখন পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করছিল ঠিক সেই মাহন্দ্রেক্ষণে কলকাতার বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ-গানটি। বাঙালির বিজয়ের ঐতিহাসিক ক্ষণে কালজয়ী গানটিতে কণ্ঠ দেওয়া শিল্পীদের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ।
নজরুল সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ নজরুল সংগীতশিল্পী পরিষদের সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র একাডেমি। জাতীয় কবিতা পরিষদ, কচিকাঁচার মেলা, উদীচী, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদসহ বহু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সব পারদর্শিতাকে ছাপিয়ে বিনম্র গৌরবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন কণ্ঠযোদ্ধা পরিচয়টি বহন করতেই তিনি সবচেয়ে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
তাঁর দুটি গানের অ্যালবাম রয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ১২টিরও বেশি গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি ও স্মৃতি ৭১ তার বহুল আলোচিত বই। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য পেয়েছেন চয়ন স্বর্ণপদক, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ফাউন্ডেশন সম্মাননা, পশ্চিমবঙ্গের নজরুল একাডেমি সম্মাননা পদক।
বুলবুল মহলানবিশ বাংলাদেশের একটি দীপ্তিময় অধ্যায়ের অংশ। শেষ জীবনে অনেকটা নিভৃতচারী হয়েই আজ যাত্রা করলেন অনন্তলোকে। বাঙালি তাঁকে মনে রাখুক আর নাই রাখুক, বাংলার প্রতিটি ধূলিকণা, নদী – ফুল – বাতাস আগলে রাখবে তাঁকে।