পটুয়াখালী বাউফলের ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি আধুনিক ডিজাইনের পণ্য সামগ্রী এখন বিদেশের বাজারও দখল করেছে। কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য। বাউফল উপজেলার মদনপুরা ও কনকদিয়া ইউনিয়নের পালপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, করোনার ধাক্কা সামলে বর্তমানে আবার কর্ম ব্যস্ততা ফিরেছে পালপাড়ায়। মৃৎপল্লীতে চোখে পড়েছে মাটির তৈরি বাহারি সব তৈজসপত্র ও নানা রঙ বেরঙ এর খেলনা। এগুলো দ্রুত বাজারজাত করার জন্য চলছে প্যাকেজিং। কাগুজিরপুল সেতুর ঢালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে লোড করা হচ্ছে মাটির তৈরি পণ্যের ঝুড়ি। থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায় এখানকার মাটির পণ্য।
রুচিশীল মাটির পণ্য তৈরির জন্য একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বাউফলের বিশ্বেশ্বর পাল জানান, এখানকার মাটির পণ্যের চাহিদা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও আছে। এ সকল পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য আড়ং, কোর দি জুট ওয়ার্কস, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিকের পণ্যের প্রভাবে তাদের বাপ দাদার পেশা যখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তখন আমরা আধুনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরির কৌশল বেছে নিয়েছি। আশির দশকে ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বাউফলের মাটির পণ্যের মান দেখানো হয়। ওই সময় আড়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। তারা বাউফলে তৈরি মাটির পণ্য দেখে মুগ্ধ হয়। সেই থেকেই তাদের সহযোগিতায় এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। এরপর ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে ঢাকায় বাউফলের তৈরি নানা ধরনের মাটির পণ্য সরবরাহ শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা কঠোর পরিশ্রম ও মননশীলতা দিয়ে মাটির পণ্যকে বিশ্বমানের আধুনিক পণ্যে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা গর্বের অংশীদার হয়েছেন। বর্তমানে বাউফলের মাটির পণ্য এশিয়া মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বাউফল পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বাউফলের একটি মৃৎশিল্প কারখানার মালিক শংকর পাল জানান, প্রতিবছরই পণ্যের ডিজাইনে পরির্বতন আসে। ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নতুন ডিজাইন করে তাদের চাহিদাপত্র দেয়। সে অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য তৈরি হয়। তিনি বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সবগুলো মাটির পণ্যেই নতুনত্ব এসেছে।
অপর মৃৎশিল্পী শ্যামল পাল জানান, এ বছর ডিনার সেটের পাশাপাশি নতুন ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে স্যুপ সেট। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে নতুন ডিজাইনের কয়েলদানি, মোমদানি, ঘটি, ফুলদানি ও নানা ধরনের খেলনা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে। তিনি বলেন, ডিনার সেট ছাড়াও আলাদাভাবে বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছে মাটির প্লেট, গ্লাস, জগ, মগসহ আরও অনেক কিছু। রাসায়নিক কোন পদার্থের ছোঁয়া ছাড়াই তৈরি হয়েছে মাটির এসব পণ্য। পণ্যের গায়ে রঙ করা হয় পাহাড়ি গাছের রস দিয়ে।
মৃৎশিল্প কারখানার মালিক শিল্পী বরুন পাল বলেন, এক সময় বাউফলের পাল পাড়ায় জালের কাঠি, পুতুল, কলস, বাচ্চাদের খেলনা, রসের হাঁড়িসহ গ্রামবাংলার ঘরে ব্যবহার্য নানা ধরনের মাটির সামগ্রী তৈরি হতো। ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিক সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একই কাঁচামালে তৈরি হতে থাকে মোমদানি, অ্যাশট্রে, ফুলদানি, ডিনার সেট, টি-সেট, মাটির মালা, ব্রেসলেট ও কানের দুলসহ আর্কষণীয় মাটির শো-পিস। তিনি জানান, আধুনিক ডিজাইনের এসব মাটির পণ্য তৈরি করে অনেক পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।