দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আগামী ২০ জুলাই আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে দেশের প্রথম বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ২০২৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাও হবে এমন উদ্যোগের মাধ্যম। দেশের অন্য সিটি করপোরেশনগুলোতেও একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এসব তথ্য জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বিষয়ক সভায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
সভার আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দিনে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে
নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় যৌথভাবে কাজ করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ইনসিনারেশন ব্যবস্থা অনুসরণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বর্জ্য নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ৩০০০ টন মিক্সড বর্জ্য থেকে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। স্পন্সর হিসেবে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই ইনসিনারেশন প্লান্টে যুক্ত থাকবে। এই প্রকল্প আগামী ২৪ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ভর্তুকি দিয়ে ২৫ বছর পর্যন্ত কিনে নেবে।
তাজুল ইসলাম জানান, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ডিএনসিসি ৩০ একর জায়গা দিয়েছে। সেখানে দৈনিক ৩০০০ টন বর্জ্য সরবরাহ করা হবে। বর্জ্য সরবরাহ করতে হবে বিনামূল্যে। উৎপাদিত ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিডিবি চুক্তিমূল্য অনুযায়ী কিনে নেবে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না। উৎপাদনে ডিজেলের চেয়েও খরচ কম হবে।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধারণা ও অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য এ ধরনের প্রকল্পের কোনও বিকল্প নেই। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন আমাদের বর্জ্য নিষ্পত্তি হবে তেমনি বিদ্যুতের মতো অতি প্রয়োজনীয় শক্তিও আমরা উৎপাদন করতে পারবো যা আমাদের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার কিছুটা সংকুলান হবে।
৩ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য ল্যান্ডফিলে পৌঁছে দিতে না পারলে উৎপাদকদের ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা দেবে ডিএনসিসি। তেমনিভাবে তারা প্রতিদিন সাড়ে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারলে ডিএনসিসি তাদের থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা জরিমানা হিসেবে পাবে। বর্তমানে প্রতিদিন ডিএনসিসি এলাকায় সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি মিলবে
দাম কিছুটা বেশি হলেও ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ তা কিনে নেবে বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, এই বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব। এর দাম প্রতি ইউনিট ২১ টাকার বেশি পড়বে।
নসরুল হামিদ বলেন, কিছুদিনের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও সেটা সামাল দেওয়া গেছে। সামনে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।