বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ ঠেকাতে একাধিক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ।
পুলিশের টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোড়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের দাবি, কোনও কারণ ছাড়াই বিএনপির মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটের অধিকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, গুম-খুন ও সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের একদফা দাবি বাস্তবায়নে বগুড়ায় পদযাত্রার করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টা থেকে বনানী টু মাটিডালী বিমান মোড় পর্যন্ত পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় জেলা বিএনপি। এতে যোগ দিতে গাবতলী, শাহাজানপুর, ধুনট, শেরপুর ও শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডের বিএনপিসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বনানী থেকে মিছিল নিয়ে সাতমাথার জেলা কার্যালয়ের দিকে রওনা দেয়।
স্থানীয়রা জানায়, বিএনপির মিছিলটি ইয়াকুবিয়া মোড়ে এসে সোজা রাস্তা দিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে মিছিলের পেছন থেকে লাঠি সোটা, ইট ছুড়তে থাকেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ তীব্র হলে টিয়ারশেল পরবর্তীতে রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের অন্তত ছয় সদস্য আহত হন।
এদিকে, পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের সময় ছোড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া স্কুলের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৩২ জন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছে।
ওই টিয়ারশেলের ধোঁয়া পুরো এলাকা ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে দুপুর একটার দিকে থেকে ইয়াকুবিয়া স্কুলের রাস্তার ধারের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ থাকে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অব্যবহৃত বার্ন ইউনিটের আইসিইউ রুমে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান নার্সিং সুপার ফিরোজা বেগম।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কারও চোখে জ্বালা পোড়া বেশি। কারও শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে। আমরা অবস্থা দেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। এখন অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
আইসিইউ বেডে শুয়ে থাকা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার বলে, দুপুরে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হতে থাকে। এরপর ক্লাসরুমে ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন চোখ জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পরে ম্যাডাম এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়ার মা খাদিজা বেগম জানান, বিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন তিনি। তার মেয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
ইয়াকুবিয়া স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক বদরুন্নাহার বলেন, দুপুর একটার দিক থেকে মেয়েরা অসুস্থ হতে থাকে। প্রথমে আমি কয়েকটি মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসি। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষক, আয়া তারাও মেয়েদের নিয়ে আসে হাসপাতালে।
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস কবির বলেন, প্রথমে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে আসি। পরে অবস্থা বেশি খারাপ মনে হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের অন্তত এক দেড়শ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়। অনেকের বাবা-মা বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেছেন।
হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে তিনটার পর্যন্ত ৩২ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিক আমিন কাজল জানান, স্কুলের পাশের রাস্তায় টিয়ারশেল নিক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীরা ধোঁয়ায় বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেকের সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট হয়েছে।
ডা. কাজল বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেকে ধোঁয়ার কারণে ভয় পেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। আর হাসপাতালে অনেক লোকজন ভিড় করছেন, এতেও তারা নার্ভাস থাকছে।
খবর পেয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ অন্য নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীতে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু হাসপাতালে তাদের দেখতে যান।