ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা সংলগ্ন রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে মিসর। দেশটি আশঙ্কা করছে, গাজার লাখো ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে সিনাই মরুভূমিতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে ইসরায়েল।
এদিকে, কায়রো জানিয়েছে নিজেদের আশ্রয়স্থে থেকে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং মিসরের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফিলিস্তিনিরা আশঙ্কা করছেন, একবার উচ্ছেদের পর অন্য আরব দেশে শরণার্থী হয়ে গেলে আর কখনও তারা নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।
গাজায় কয়েক দিন ধরে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলী বাহিনী। তবে ইসরায়েলের কূটনীতিকরা স্বীকার করছে না যে, গাজার ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা তাদের লক্ষ্য। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, তাদের পরিকল্পনা হলো সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। অপর এক মন্ত্রী গিদিয়ন সার বলেছেন, যুদ্ধ শেষে গাজাকে আগের চেয়ে ছোট হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি আয়ালন বলেন, মিসরের উচিত সাময়িক সময়ের জন্য শরণার্থীদের গ্রহণ করা। সিনাই মরুভূমিতে অনেক জায়গা রয়েছে। এটি একেবারে গাজার পাশে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল কর্তৃক গাজার ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সম্ভাব্যতা নিয়ে রোববার সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে আলোচনা করেছেন। ওই দিনই তার কায়রো সফরে যাওয়ার কথা ছিল।
সব আরব দেশ এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এতে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে। কিন্তু যদি উচ্ছেদ ঘটে যায় তাহলে হয়ত তাদের সামনে শরণার্থী শিবির স্থাপনে তহবিল দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। ১৯৪৮ সালে উচ্ছেদ হওয়া বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিদের আত্মীয় গাজায় রয়েছেন। তাদের আশঙ্কা আরেকবার গণ উচ্ছেদের ফলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটতে পারে।
বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই তাদের ভূমিতে অটল থাকতে হবে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, মিসরের সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ একমত। কায়রোতে তিনি বলেছেন, আমি আরও একবার ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার জন্য। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আমরা। মিসরে তাদের স্থানান্তর আমরা কখনও সমর্থন করব না।
মিসরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরি শনিবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবকের সঙ্গে বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় আটকে পড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি নাগরিকদের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিসরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ বহরের প্রবেশের অনুমতি দেবে। মিসরের হাতে দরকষাকষির যেসব হাতিয়ার রয়েছে এটি সেগুলোর একটি।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ঢল মিসরে প্রবেশ এড়াতে চায় কায়রো। একই সঙ্গে বেশ কিছু জরুরি উদ্যোগও গ্রহণ করছে তারা। তাদের দাবি, অল্প সংখ্যক শরণার্থীর জন্য এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বড় আকারের শরণার্থী শিবির গড়ে তোলার বিরুদ্ধে তারা। তাদের আশঙ্কা, এসব শিবিরে সিসি ও ইসরায়েলি বিরোধী ব্যক্তিরা অবস্থান নিতে পারে। সিনাই উপদ্বীপে ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মিসরীয় সেনারা।
কয়েক দশকের সংঘাতের পর ১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করেছে মিসর। এরপর থেকে দুই দেশ পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ধারণা করা হয় বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ফিলিস্তিনি অভিবাসীদের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে জর্ডানে ৩০ লাখ ও লেবাননে ৪ লাখের মতো ফিলিস্তিনি রয়েছেন। মিসরে এই সংখ্যা অনেক কম। ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড শান্তি চুক্তির পর থেকে মিসরে খুব কম ফিলিস্তিনি শরণার্থী বা নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত।
তবে মিসরীয় পার্লামেন্টে বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির আন্ডার সেক্রেটারি তারিক আল-খৌলি বলেছেন, ইউক্রেনকে রক্ষায় যে বিশ্ব খুব সরব তারা কীভাবে শোকাহত ফিলিস্তিনি মানুষদের প্রতি চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে?
পশ্চিমাদের দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেছেন, গাজার মানুষদের উচ্ছেদ করা হবে অপরাধ।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদিও শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে না। বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, ফিলিস্তিনিদের নিজ মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হলো চরম সীমা লঙ্ঘন, তিনি তা মেনে নেবেন না।