রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নির্মিত দেশের প্রথম শহিদ মিনারের স্বীকৃতি দিতে ফের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভাষা সংগ্রামী মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজশাহী কলেজ প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এই দাবি করেন তিনি। প্রথম শহিদ মিনারের স্বীকৃতির দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি।
আখুঞ্জি আরও বলেন, বায়ান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল। সেদিন রাতেই আমরা কয়েকজন ছাত্র রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে ইট ও কাদামাটি দিয়ে একটি শহিদ মিনার তৈরি কিন্তু পরদিন সকালে পুলিশ এসে সেটি গুঁড়িয়ে দেয়। সেটি ছিল দেশের প্রথম শহিদ মিনার কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও আমরা এই শহিদ মিনারের কোনও স্বীকৃতি পাইনি। অনেকবার আন্দোলন হলেও এর কোনও সমাধান আমরা পাইনি। এবার আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, এই শহিদ মিনারের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শহিদ মিনারটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার ছিলেন এই ভাষা সৈনিক।
রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ভাষা সৈনিক আব্দুল গাফফারের ছোট ভাই মন্টু, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা: হবিবুর রহমান, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) সভপতি প্রকৌশলী মো: আমিনুল হক, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রিপন, নাট্যব্যক্তিত্ব ও চিত্রসাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীরসহ রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাঃ হবিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ আন্দোলন করে যাচ্ছি। এখনও ভাষা সৈনিকরা বেঁচে আছেন, তথ্য-প্রমাণ হাতে আছে। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হোক, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। আমরা আমাদের তথ্য, উপাত্ত, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিব। সবার সহযোগিতায় এই শহিদ মিনারের স্বীকৃতি দেওয়া হোক এটিই আমাদের দাবি।
এসময় রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলের গুটিকয়েক ছাত্র ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রয়ারি রাতে মুসলিম হোস্টেল গেইটে দেশের প্রথম শহিদ মিনার, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা এর স্বীকৃতি পাইনি। এই শহিদ মিনার তৈরির পরের কিছু ছবি আমরা সংরক্ষণ করে রেখেছি। আমরা সরকারের নিকট এই শহিদ মিনারের স্বীকৃতির জন্য দাবি জানাচ্ছি।
রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, ৫২ সালে দেশের অন্যান্য স্থানে যেসব শহিদ মিনার স্থাপিত হয়েছে। সেগুলোকে দেশের প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্য একটি গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসের শহিদ মিনারের স্বীকৃতি না পাবার জন্য রাজশাহীর রাজনৈতিক নেতারা দায় এড়াতে পারেন না। তাদের ব্যর্থতার কারণেই আজও স্বীকৃতি মেলেনি ঐতিহাসিক এই স্থাপনার।
রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ৫২’র আন্দোলনে রাজশাহীর সর্বস্তরের পেশাজীবী ছাত্র-জনতার গৌরবময় ভূমিকা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে দেশের প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে যেটি স্বীকৃত সেটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি। অথচ দেশের প্রথম শহিদ মিনার হয়েও আজও তা অবহেলায় রয়েছে রাজশাহী কলেজের শহিদ মিনারটি।
তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পার হলেও অনেকেই দেশের প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের ইতিহাস জানেনা। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই এই শহিদ মিনারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। বক্তারা বলেন, যতদিন না আমরা স্বীকৃতি পাচ্ছি, এর দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে।