পদ্মা জয়ের বছরপূর্তি, গতি বেড়েছে দক্ষিণের জনজীবনে

২০২২ সালের আজকের দিনটি ছিল বাঙালির জন্য গর্বের দিন। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এইদিনে সাড়ম্বরে এর উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, গত শুক্রবার পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৭৯৫ কোটি টাকা। গেল এক বছরে সেতু দিয়ে ৫৬ লাখের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর টোল আদায় ও যানবাহনের চলাচলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়কে চুক্তি অনুসারে ঋণও পরিশোধ করছে সেতু বিভাগ।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, চালুর প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে পদ্মা সেতু দিয়ে। সবশেষ গত শুক্রবার ২৫ হাজার ৮০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এই সেতু দিয়ে। দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর পর চালুর পরদিন থেকেই মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় পদ্মা সেতুতে। তবে গত ঈদুল ফিতরের আগে ফের মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সেতু বিভাগ। ফলে দৈনিক যানবাহন চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে।

গত ৫ এপ্রিল পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫০ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৯ জুন ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা পরিশোধ করা হয়। দুই দফায় ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৩ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগের সাথে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে সমুদয় ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, গত এক বছরে যে পরিমাণ আয় হয়েছে, আগামীতে তা আরও বাড়বে। কারণ, সেতুতে রেল চলাচল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রকল্পের টাকায়। পুরো ব্যয়ভার এখন সেতু কর্তৃপক্ষের ও্পর থাকলেও দুটি বিকল্প নিয়ে রেল ও বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে আলোচনা চলছে। রেল ও বিদ্যুতের জন্য প্রকল্পে যত ব্যয় হয়েছে, সেই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করে দেবে। এছাড়া সেতু বিভাগকে বার্ষিক হারে টোল দেবে। এর বাইরে গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সেবা সংস্থাও টোল দেবে। এক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণের বোঝা কমবে এবং টোল আয়ও বেড়ে যাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী টোলের টাকা থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট সরকারকে দিতে হবে। এরপর টোল আদায়ের জন্য পাঁচ বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়েকে ৬৯৩ কোটি টাকা দিতে হবে।

এর বাইরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য বড় অংকের ব্যয় করতে হবে। এরপর যে টাকা থাকবে, তা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবে সেতু বিভাগ।

এসব খরচ মিটিয়ে যা থাকবে তা সেতু কর্তৃপক্ষের লাভ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে এই লাভ থেকে আবার সরকারকে ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

চালুর পর পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে। এখন ঢাকার সায়েদাবাদ পার হওয়ার পর থেকে বরিশালে যাতায়াত করা যাচ্ছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। খুলনায় চার ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ। মালামাল পরিবহননেও গতি এসেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন অনেক সহজে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য রাজধানীতে পাঠাতে পারছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি এসেছে।

দেশের যুগান্তকারী এই স্থাপনা নির্মাণে দেড় দশক লেগেছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে নানা জটিলতার পর দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পের মূল দুই ঠিকাদার চীনের। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার।