ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন আলেক্সি ইয়েমিকভ, মুঙ্গি বাওয়েল্ডি ও লুই ব্রুস নামের তিন বিজ্ঞানী। কোয়ান্টাম ডট আবিস্কার ও সংশ্লেষণের জন্য তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
বুধবার বাংলাদেশ সময় ৩:৪৫ মিনিটে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
নোবেল কমিটি জানায়, ন্যানো পার্টিকেলের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণসূচক আবিষ্কার ‘অতিক্ষুদ্র কোয়ান্টাম ডট’ এবং এর বিকাশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই পুরস্কারের মাধ্যমে।
ন্যানোটেকনোলজির এই ক্ষুদ্র উপাদানগুলো এখন টেলিভিশন ও এলইডি লাইটে আলো ছড়াচ্ছে এবং আরও অনেকক্ষেত্রে সহায়তার পাশাপাশি এগুলো টিউমার টিস্যু অপসারণে চিকিৎসকদের সাহায্য করছে।
১৯৮০ এর দশকে ইয়েকিমভ একটি রঙিন গ্লাসে আকার নির্ভর কোয়ান্টামের প্রভাব তৈরি করেন। কপার ক্লোরাইডের ছোট ছোট কণা থেকে এই রঙ এসেছে।
তিনি প্রমাণ করেছেন কণার আকার কোয়ান্টাম প্রভাবের মাধ্যমে গ্লাসের রঙকে প্রভাবিত করে।
এর কয়েক বছর পর ব্রুস প্রমাণ করেন, তরলে অবাধ ভাসমান কণাগুলোতে আকার নির্ভর কোয়ান্টামের প্রভাব রয়েছে।
এরপর ১৯৯৩ সালে বাওয়েল্ডি কোয়ান্টাম বিন্দুগুলোর রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করেন। এই পরিবর্তনকে নোবেল কমিটি ‘প্রায় নিখুঁত কণা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কোযান্টাম বিন্দুর এই বিকাশের ফলে কোয়ান্টাম বিন্দুগুলোকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
মুঙ্গি বাওয়েল্ডি ১৯৬১ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করছেন।
লুই ব্রুসের জন্ম ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে। তিনি বর্তমানে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
আলেক্সি ইয়েকিমভ ১৯৪৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিউইয়র্কের ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি ইনকরপোরেশনের সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী।
আলো যখন কোয়ান্টাম বিন্দু দিয়ে যায় তখন একটি নির্দিষ্ট রঙ নির্গত করে। আরো পরিস্কার করে বলা যায় বিন্দুগুলোর আকারের মাধ্যমে এই রঙ নির্ধারিত হয়।
বড় বিন্দুগুলো লাল রঙের দেখায় এবং ছোট বিন্দুগুলোকে সবুজ বা নীল রঙ দেখায়।
কণার আকারের সামান্য পরিবর্তনে আলোর বর্ণালীতে রঙের পরিবর্তন হয়। কোয়ান্টাম বিন্দু এখন বিশ্বজুড়ে মানুষের লিভিংরুম থেকে শুরু করে অপারেটিং থিয়েটারে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এগুলো ব্যাপকভাবে টেলিভিশনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সনাতন এলইডি প্যানেলের তুলনায় এর বেশ কয়েকটি সুবিধা আছে, যার মাধ্যমে আরও প্রাণবন্ত ও নিখুঁত রঙ তৈরি করা সম্ভব।
পাশাপাশি কাজ করার জন্য কম শক্তির প্রয়োজন হয়।
কোয়ান্টাম বিন্দুগুলো মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা ক্যানসারের টিউমারে রোগাক্রান্ত টিস্যু থেকে ভালো টিস্যুকে আলাদা করতে পারেন।
নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীরা পাবেন একটি করে নোবেল মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা।