দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে দশজন আটক

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানা থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

এর আগে, রাত সাড়ে আটটা থেকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালীবাড়ি এলাকার ওই বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় সিটিটিসির সোয়াট টিম ‘অপারেশন হিল সাইড’ নামে অভিযান চালাচ্ছে। সকালে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, অভিযান চালিয়ে মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

‘ঢাকায় আমরা একজনকে আটক করেছি, যিনি এই জঙ্গি আস্তানা থেকে তার পরিবারকে আনার জন্য গিয়েছিলেন,’ জানান আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন ব্যাপক সংখ্যক লোকদের উগ্রবাদের দীক্ষা দিয়েছে। সেসব লোকজন হিজরতের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে। শুরুতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল মৌলভীবাজারের যে কোনও একটি পাহাড়ে তারা তাদের আস্তানাটি তৈরি করেছে। গতকাল আমরা চূড়ান্ত তথ্য পাই।’

‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন নারী। এছাড়া তিন শিশুও ছিল।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘বিনা বলপ্রয়োগে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদের হেফাজতে নেওয়ার পরে আমরা জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক ও ৫০টির মতো ডেটোনেটর উদ্ধার করি। যা দিয়ে গ্রেনেডসহ হাই এক্সপ্লোসিভ তৈরি করা হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নতুন একটি সংগঠন, এর নাম “ইমাম মাহমুদের কাফেলা”। বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে, সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন। এই সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়েছি। আশা করি, তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হবো।’

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’র এই অভিযানে তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী; কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়েছে,’ বলেও জানান তিনি।

আটক অভিযুক্তরা হলেন- সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তাদের মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কালনার আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৮), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনার আটঘরিয়ার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোরের চাঁদপুর গ্রামের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮)।

পূর্ব টাট্টিউলি বাজারের চা দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় দুই মাস আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছেন। তার দোকানে এসে অল্প বয়সের দুই পুরুষ মানুষ নিয়মিত চা খেতেন। তারা বলেছিল, তাদের বাড়ি বগুড়ায়। নদী ভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছেন। আরও পরিবার আসবে।