ইনিংসের স্কোরকার্ড বলবে দুই দলের সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেটি টাই হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এই ম্যাচটি স্কোরকার্ড দেখে বোঝার উপায় নেই। বলা হচ্ছে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডের কথা। যেখানে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে ফারজানা হকের ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির পর, হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যাওয়া ম্যাচটিতে দুর্দাস্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প। এমন নানা কিছুর কারণেই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ম্যাচের একটি হয়ে তা লেখা থাকবে স্মৃতির পাতায়।
মিরপুরে ১-১ সমতায় থেকে শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো বাংলাদেশ ও ভারত। প্রথম ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও, পরের ম্যাচ জিতে সমতায় ফেরে সফরকারিরা। বাংলাদেশের ২২৫ রানের জবাবে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ রান তাড়ার দিন ভারতের রান থেমেছে ২২৫–এ। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে কোনো দল না জেতায় সিরিজও শেষ হয়েছে সমতায়। তিন ম্যাচ সিরিজ তাই ১-১ ড্র। নারী ওয়ানডে এর আগে ৮টি ‘টাই’ দেখলেও বাংলাদেশের নারী দলের জন্য এই অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম।
মিরপুরে আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটে ভর করে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। দলীয় ৯৩ রানে অর্ধশতক তুলে নেয়া শামীমা সুলতানা আউট হলে ভাঙে টাইগ্রীসদের উদ্বোধনী জুটি। এরপর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির সাথে ৭১ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান ফারজানা হক পিংকি। তবে পাঁচ রানের ব্যবধানে নিগার ও ঋতু মণির উইকেট হারালেও ফারজানার ব্যাটে এগিয়ে যাচ্ছিলো স্বাগতিকরা। একপ্রান্ত আগলে রেখে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান ফারজানা হক। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১০৭ রান। ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন সোবহানা মোস্তারি।
প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকা বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটাও হয়েছিলো দুর্দান্ত। ৩২ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষের দুই উইকেট তুলে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিলো মারুফারা। তবে তৃতীয় উইকেটে স্মৃতি মান্দানা ও হারলিন দেওলের ১০৭ রানের জুটিতে আবার ম্যাচে ফেরে ভারত। ১৩৯ রানের হাফ সেঞ্চুরি করা স্মৃতিকে ফেরান ফাহিমা খাতুন। থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক হারমনপ্রীত করও। তবে জেমিমা রদ্রিগেজের ব্যাটে লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকে ভারত।
ইনিংসের ৪২তম ওভারে কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। একই ওভারে পরপর দুটি রান আউটে ফিরে আসে ম্যাচেও। প্রথমে হারলিন দেওল এবং ওভারের শেষ বলে রান আউট হন সদ্য ক্রিজে আসা দীপ্তি শর্মা। তখনো জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন তখন ৪৮ বলে ৩৪ রান। তখনো ম্যাচ ভারতেরই হাতে বলা যায়।
এরপর আটোঁসাটো বোলিং এবং নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। শেষ ওভারের জয়ের জন্য ভারতের দরকার ৬ বলে ৩ রান। বাংলাদেশের ১ উইকেট। প্রথম দুই বলেই ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটার জেমিমা রদ্রিগেজ ও মেঘনা সিং দুটি সিঙ্গেল নেয়ায় তা আরো সহজ হয়ে যায়। কিন্তু পরের বলেই মারুফাকে লেট কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে যান মেঘনা। মিরপুর জেগে উঠে বাঘিনীদের গর্জনে।
এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো দুইশো ছাড়ানো স্কোর পেলো বাংলাদেশ নারী দল। যা ঘরের মাঠে খেলা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ ভারতের বিপক্ষেও। সব মিলিয়েই এটা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।