মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি চলাকালীন ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় উপজেলার কাঁঠালতলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ চারজনকে আটক করেছে ডাসার থানা পুলিশ। তারা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির উপ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান ওরফে খোকন তালুকদার (৪৫), ডাসার যুবদল নেতা নুরু তালুকদার (৪৩), ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মন্নান সরদার (৫৫) কালকিনি উপজেলা স্বেচ্ছাবেসক দলের আহ্বায়ক শহিদুল ব্যাপারী (৪০)।
হামলায় আহত বিএনপি ও ছাত্রদলের ১০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন কালকিনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলু ব্যাপারী (৬০), ছাত্রদল নেতা শামীম মোল্লা (৩০), তরিকুল ইসলাম (২৮), রাসেল মাতুব্বর (৩০), রাজ্জাক সরদার (৫০), বনি আমিন (২৫), বায়েজিদ সরদার (৩২), সারাফাত ব্যাপারী (২৫), দুলাল বিশ্বাস (৩৫), মামুন শিকদার (৩৭)।
এছাড়াও হামরায় ছাত্রলীগ তিনজন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফ আশিক (২৫) ও অর্থ সম্পাদক কাজল আহমেদ (২৩), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল কবির (২৬) ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মিল্টন ঢালী (৩৫)। শনিবার সন্ধ্যায় গুরতর অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা আশিক ও কাজলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ডাসার উপজেলা বিএনপি, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কেন্দ্রীয় বিএনপির ১০ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাদারীপুরের পাঁচটি উপজেলায় একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেল তিনটায় ডাসার উপজেলায় ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন তালুকদারের সভাপতিত্বে উপজেলার কাঁঠালতলা বাজার এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলাকালীন ডাসার বাজার আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির অনুষ্ঠানে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এতেই বিএনপির ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেকাকর্মীদের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বিএনপির অনুষ্ঠানে হামলা শুরু করে। এসময় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এরপর দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ডাসার থানা পুলিশ চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির চার নেতাকে আটক করে পুলিশ। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করতে হামলা চালিয়েছে।
ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘পূর্ব ঘোষিত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি যথাসময়ে শুরু করি। নেতাকর্মীরা সবাই আালোচনা শুরু করে। তখনই আওয়ামী লীগের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে আমাদের অনুষ্ঠানে হামলা চালায়, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। পরে আমাদের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ শুরু করে। পুলিশ আমাদের রক্ষা না করে তাদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের ছেলেরা হাতে দের্শী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পরে আবার আমাদের কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ চারজনকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ এককভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের আটক করতে পারে না। আমরা এ হামলা ও আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
অভিযোগের বিষয় ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি অন্য জেলা থেকে লোক ভাড়া করে এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও কটুক্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিল। আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের এ ধরনের কথা বলতে নিষেধ করায় তারা উল্টো আমাদের ছেলেদের ওপর হামলা করেছে। তাদের উপর কোন হামলা চালানো হয়নি। তাদের হামলায় আমাদের ছাত্রলীগের দুজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ডাসার থানার ওসি হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ চারজনকে আটক করেছি। আটককৃতদের নেতৃত্বে ছাত্রদল যুবদলের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের দুই জন কর্মীর ওপর হামলা করছে। ছাত্রলীগের দুজন হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ কারণে বিএনপির চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’