টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম জয়, একুশ শতকের প্রথম

মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেই বড় জয়ের ভিতটা তৈরি করে রেখেছিলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে ৬৬২ রানের বিশাল টার্গেট দেয়ার পর শেষ বিকেলে দুই উইকেট তুলে নেয়ায় স্বাগতিকদের জন্য জয় ছিলো সময়ের ব্যবধান মাত্র। চতুর্থ দিন প্রথম সেশনেই সে কাজটা সেরে ফেললেন বাংলাদেশের বোলাররা। আর তাতে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।

শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, আফগানদের বিপক্ষে ৫৪৬ রানের এই জয় রানের হিসেবে টেস্ট ইতিহাসেরই তৃতীয় বৃহত্তম। একুশ শতকে এটিই এখন সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। এর আগে ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিলো ইংল্যান্ড। আর ১৯৩৪ সালে ইংলিশদের ৫৬২ রানে হারিয়ে সে শোধ নিয়েছিলো অজিরা।

এই টেস্টে আফগানদের থেকে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে থাকলেও ভয় ছিলো পঁচা শামুকে পা কাটার। তার পেছনে কারণ ছিলো ২০১৯ সালে আফগানদের সাথে প্রথম টেস্ট ম্যাচে ২২৪ রানের বিশাল পরাজয়। তবে এবার আর তেমন কিছু ঘটতে দেয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশই।

তৃতীয় দিনের ২ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাটিং শুরু করে আফগানিস্তান। দিনের তৃতীয় ওভারেই নাসির জামালকে ফিরিয়ে দেন ইবাদত হোসেন। এরপর জোড়া উইকেট তুলে নেন শরীফুল ইসলাম। আফসার জাজাই ও কনকাশন সাব হিসেবে ব্যাট করতে আসা বাহির শাহকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান এই বাহাতি পেসার।

এরপর দেখা যায় প্রথম ইনিংসে বিবর্ণ থাকা তাসকিন আহমেদের ঝলক। যার  শুরুটা দ্বিতীয় ইনিংসে আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা রহমত শাহের উইকেট দিয়ে। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন এই টেস্টে অভিষিক্ত করিম জানাতকে। প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই আমির হামজাকে নিজের শিকারে পরিণত করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

এরপর বেশ নাটকীয়তার মাধ্যমে ইতি টানেন তাসকিন। ৩৩তম ওভারের তৃতীয় দলে জহির খানকে কট-বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউন। ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেয়ার উদযাপনটাও সেরে ফেলেন তাসকিন। তবে রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান জহির। তাসকিনের পরের বলটি স্টাম্প সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে। তবে ফুলটস ডেলিভারিটি কোমর উচ্চতায় থাকায় নো বল ডাকেন আম্পায়ার। পরপর দুই বলে জয় বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। এরপর দুটি ডেলিভারি ঠেকিয়ে দিলে ওভারের শেষ বলে কনুইয়ে আঘাত পান জহির খান। যার ফলে আর ব্যাটিং করতে পারেননি এই আফগান বোলার। ১১৫ রানে শেষ হয় আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংস। তাসকিনের পাঁচ উইকেটের অতৃপ্তি থাকলেও, বড় জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলে বাংলাদেশ।

শুধু দলগত অর্জন নয়, এই টেস্টে ব্যক্তিগত অর্জনও কম ছিলো না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। মুমিনুল হকের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়া নাজমুল হোসেন শান্ত হয়েছেন ম্যাচসেরা। ২৬ ইনিংসের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন মুমিনুল নিজেও।

তবে বড় চমকটি দেখিয়েছেন পেসাররা। ঘরের মাঠে টেস্টে মানেই স্পিনারদের উপর নির্ভরশীলতা- এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে দাপট দেখিয়েছেন পেসাররা। সবুজাভ উইকেটে তিন পেসার মিলে দুই ইনিংসে নিয়েছেন ১৫টি উইকেট। যা দেশের মাটিতে এক ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের সর্বোচ্চ উইকেট। এর আগে ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১০টি উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা।