জাহাঙ্গীর ইস্যুতে ইঁদুর-বিড়াল খেলা সাঙ্গ হলো

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিস্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের মাধ্যমে ইঁদুর-বিড়াল খেলা সাঙ্গ হলো। তাকে আদৌ আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হবে কি না এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সেটারও অবসান হলো। সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে, জাপান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেই জাহাঙ্গীর নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে।

জাহাঙ্গীরের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এ্যাডভোকেট হেলাল বলেছেন, আমাদের শেষ ভরসার জায়গা শেখ হাসিনা। উনি সাধারণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যথা বেদনা ও অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারেন। আমরা বেশ কয়েকদিন ধরেই এমন একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই নেতা আরও বলেন, এখন আমাদের কাজ হবে, প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং ঘরে ঘরে গিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া এবং বিএনপি জামায়াত ও হেফাজতের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা, কোন গুজবে কান না দেয়া। গাজী জেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

টঙ্গী, পাগার, ৪৩ নং ওয়ার্ডের আরও একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মুহূর্ত নিউজকে জানান, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃঢ় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা, তারা এই জাহাঙ্গীরের মতো একজন চিহ্নিত বেঈমান এবং শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্যকারীকে আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন একটা রাজনৈতিক দলের নেতা বানিয়েছিল, দল থেকে নমিনেশন দিয়ে মেয়র করেছিল। এই নব্য মীরজাফর গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিল, বিভিন্ন কমিটিতে উপদল সৃষ্টি করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগকে নিজের পৈত্রিক সম্পদ বানিয়েছিল, যা আমাদের আওয়ামী লীগের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও প্রমাণ করল আওয়ামী সত্য ও সঠিক পথে আছে, মাটি ও মানুষের দল আওয়ামী লীগ তার প্রতিটি নেতা-কর্মীর অনুভূতি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে। আওয়ামী লীগ এখনো আঁধারে হারিয়ে যায়নি। আমাদের আশা ভরসার নাম শেখ হাসিনা। উনি যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন প্রত্যাশার সূর্যটা বেঁচে আছে। আজকে আমাদের অনেক আনন্দের দিন, খুশির দিন।’

পাগার ঝিনু মার্কেট এলাকায় নৌকার কর্মীরা বলেন, একটা শংকা এখনো রয়ে গেছে, সেটা হলো শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হলে, গাজীপুরে আমাদের আওয়ামী লীগের কবর খু্ঁড়তে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, গাজীপুরে বিএনপি জামায়াত-হেফাজতের বিরাট একটা অংশ গোপনে রয়েছে, যারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করছে।

তারা আরও জানান, আমরা এমনও জানতে পেরেছি, লন্ডন থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থানীয় বিএনপি নেতাদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে জাহাঙ্গীরের মাকে ভোট দেয়ার। যেহেতু জাহাঙ্গীরের সৃষ্টি একটা সন্ত্রাসী বাহিনী আছে, আওয়ামী লীগের মধ্যে উপদল তৈরি করে রেখেছিল দীর্ঘদিন এই এন্টি আওয়ামী লীগের কোন ভোট নৌকায় আসবে কি না সে সন্দেহ রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঢাকার পাশ্ববর্তী গাজীপুর সিটি নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনে কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটলে এটার প্রভাব অন্য চারটি সিটি করপোরেশনেও পড়বে।এমন কিছু হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দেবে, সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ভীতিসঞ্চার হবে।

স্থানীয় নেতারা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটুক্তি করার সাহস দেখানোর পরেও, সাধারণ ক্ষমা করায় এই দুর্নীতিবাজের সাহস আরও বেড়ে গিয়েছিল। আজকে শেখ হাসিনা স্থায়ীভাবে তাকে বহিষ্কার করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। যে অদৃশ্য শক্তি তার পিছনে কলকাঠি নাড়ছিল শেখ হাসিনার উচিৎ হবে জাহাঙ্গীরের মদদদাতাকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তির ব্যবস্থা করা।

নেতাকর্মীরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করতে হলে সকল ভেদাভেদ ভুলে দুই মন্ত্রীকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এই দুই মন্ত্রী ভোটের আগের দিন পর্যন্ত গাজীপুর নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন ,খোঁজ খবর নিলে নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

টঙ্গী থানার প্রবীণ আরও এক আওয়ামী লীগ নেতা মূহূর্ত নিউজকে জানান, জাহাঙ্গীরের গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এবং মহানগর আওয়ামী লীগে কোন পদ পদবী ছিলনা, কিন্তু তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করতে এত কালবিলম্ব হওয়াটা আমাদের ভাবাচ্ছে। একটা উৎকন্ঠার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু দিন শেষে দেখলাম, না শেখের বেটি আমাদের মান রেখেছেন।

এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীসমর্থকদের ভাষ্য, ভোট নিয়ে বিএনপি জামায়াত ও হেফাজত একজোট, তাদের ভোট জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষেই যাবে এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে এন্টি আওয়ামী লীগ আছে তারাও নৌকায় ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তার মনোনীত প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দিয়ে এরপরও যদি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভরাডুবির আশংকা রয়ে যায়।

তবে আজমত উল্লাহকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সকলে একসাথে মিলেমিশে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে নৌকার প্রচার চালাবেন। তারা চান শেখ হাসিনার হাতে গাজীপুরের বিজয়ী নৌকা তুলে দিতে।