জাতীয় পার্টি মানুষের আস্থার জায়গা হতে পেরেছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ‘আমরা দেশের মানুষের সামনে তৃতীয় এবং বিকল্প অপশন সৃষ্টি করেছি। ৯০ সালের পর থেকে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে বিতশ্রদ্ধ। দেশের মানুষ একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। আমরা শক্তিশালীভাবে সাধারণ মানুষের সামনে বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি।’

সোমবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টি নেতৃবৃন্দর সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন জিএম কাদের।

তিনি বলেন, দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। বর্তমান সরকার সংবিধান মোতাবেক গেল নির্বাচনের মত একটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে, সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিএনপি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে না, তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চাচ্ছে। দেশে একটা সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সামনের দিকে আরও খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আমরা দুটি দলের মাঝামাঝি অবস্থানে নিজস্বতা নিয়ে রাজনীতি করছি।

বর্তমান সরকারি দলের নেতারা শান্তির মিছিল করছে উল্লেখ করে কাদের আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতির কারণে মানুষের মাঝে শান্তি নেই। মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু ব্যয় বেড়েই যাচ্ছে। মানুষের মানসম্মান, সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। উৎকন্ঠার মধ্যে দেশের মানুষ জীবন কাটাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা মানুষের কাছে প্রহসন মনে হয়।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, দুটি দল দেশের মানুষের জন্য কবরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে। দেশের মানুষ কবরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় না। কারো প্রতিবাদ করার শক্তি বা সাহস নেই। এমন শান্তির জন্য আমরা রাজনীতি করি না। আমরা মানুষের সত্যিকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য রাজনীতি করছি। আগামী প্রজন্ম যেনো সুনাগরিক হিসেবে শান্তিময় পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে। সরকার এমন শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেনি। শুধু, ক্ষমতায় থাকা এটা কোন রাজনীতি হতে পারে না। ক্ষমতায় আমরা যাব জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য। জাতীয় পার্টি এই রাজনীতি জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায়।

নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, তিনি মাটি ও মানুষের লোক। আশা করছি, তিনি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে পারবেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে সকল দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখবেন। বিপদে-আপদে সবার পাশে দাঁড়াবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের ফলাফল যাই হোক, আমরা আবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। দেশ স্বাধীন হয়েছে দেশের মানুষের জন্য একটি দেশ হবে। দেশের প্রজাদের জন্য একটি দেশ হবে। দেশের মালিক জনগণ, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি জনগণের ইচ্ছেমত দেশ পরিচালনা ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের জনগণ আবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করবেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে চাই। স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখতেই আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।

সভায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচন হলেই নির্বাচন নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন মানেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনুপাতিক হারে নির্বাচনের যে ফর্মূলা দিয়েছিলেন এখন তা সময়ের দাবি। আনুপাতিক হারে নির্বাচনে কোন প্রার্থী থাকবেন না, নির্বাচনে শুধু প্রতীক থাকবে। প্রাথী না থাকায় কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাস, পেশী শক্তি বা কালো টাকার ছড়াছড়ি থাকবে না। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতীকে ভোট দেবেন। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবেন, সেই দল তত শতাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে। তিনি বলেন, কর্মমূখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। প্রতিদিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু বেকারত্ব দূর করতে কোন উদ্যোগ নেই। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থকে মুক্তি চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম মতবিনিময় সভায় বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে শুধু সুশাসন দিতে পেরেছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দেশের মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। দুটি দল মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দলবাজী, টেন্ডারবাজী ও স্বজনপ্রীতি সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ আর দুর্নীতি ও দুঃশাসন দেখতে চায় না। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি হচ্ছে গণমানুষের পার্টি। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই।

সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা আখতার এমপি, হেনা খান পন্নি, সদস্য ডা. সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, ফরিদা ইয়াসমিন, এডভোকেট লাকী বেগমসহ জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।