দুই দশক আগেও চীনের অর্থনীতির পরিধি ছিল মার্কিন অর্থনীতির মাত্র ১৪ শতাংশ। তখন থেকেই বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদের জায়গা পোক্ত করবে।
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০০৩ সালে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেখানে তারা উল্লেখ করে, ২০৪১ সাল নাগাদ চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। এরমধ্যে ২০০৭-০৯ সালে বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকট তৈরি হয়। সেই সংকটের সময় গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনেকটা দূরবর্তী মনে হয়েছিল।
কিন্তু এরপর থেকে দেশ দুটির অর্থনৈতিক ব্যবধান কমতে থাকে। এ সময়টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা কারণে হোঁচট খেয়েছে, তবে চীনের দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সাথে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের ধারাবাহিক উত্থান হয়েছে। ফলে ২০১০ সাল নাগাদ চীনের জিডিপির আকার যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ হয়ে ওঠে।
গোল্ডম্যান স্যাকস তখন ফের সেই দিনক্ষণ এগিয়ে আনে। তারা জানায়, ২০৪০ এর দশকে নয়, চীন ২০২০ এর দশকেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে অর্থনৈতিকভাবে।
তবে দ্য ইকোনমিস্ট আরও বেশি আশাবাদী হয়ে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার আমলে হিসাব করে জানায়, ২০২৯ সালেই চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু সেই পূর্বাভাসেরও পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে দ্য ইকোনমিস্ট শুধু চীনের প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি নিয়েই চিন্তিত নয়, বরং তারা চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময় হার নিয়ে চিন্তিত। হঠাৎ করেই ইউয়ানের মূল্যবৃদ্ধির ধারা থেমে গেছে।
চীন আনাড়ির মতো ২০১৫ সালে ইউয়ানের অবমূল্যায়ন করে, এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের ভীতি তৈরি হয় যে, ভবিষ্যতে ইউয়ানের আরও দরপতন হতে পারে। এতে দেশটির বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার দিনক্ষণ আরও পিছিয়ে যায়।
২০১৫ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০৩২ সালের আগে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদিও তার ১২ মাস আগেই ইআইইউ জানিয়েছিল, চীন ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করবে।
এভাবে দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে একসময় সন্দেহ দানা বাঁধে, আদৌ কি চীনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? ইতোমধ্যে দেশটির উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যায়, সাথে কমেছে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। চীনের শ্রমশক্তি কমতে শুরু করেছে, যে হ্রাসের গতি নিকট ভবিষ্যতে আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের পূর্বাভাস, ২০৩০ এর দশকের মধ্যে চীনের ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ কোটির বেশি কমে যাবে। এই বাস্তবতায় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস জানিয়েছে, চীন যদি ২০৩০ এর দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে না যায়, তাহলে তারা হয়তো আর কখনোই তাদের ধরতে পারবে না।
এই পূর্বাভাস খুব হতাশাজনক। যদিও অন্যান্য পূর্বাভাস দানকারী সংস্থা যেমন ওইসিডি, দ্য লৌয়ি ইনস্টিটিউট ও দ্য সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ বলেছে, ২০৩০ এর দশকের কোনও এক সময় চীনের জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে। ইআইইউ এখন বলছে, ২০৩৯ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে। এই পূর্বাভাস অবশ্য ২০ বছর আগে গোল্ডম্যান স্যাকসের করা পূর্বাভাসের খুব কাছাকাছি।
