মাদারীপুর সদর উপজেলা উত্তর হোগলপাতিয়া গ্রামের কামাল হাওলাদারের স্ত্রী নাসিমা বেগম
একসময় কাঁথা সেলাই করে ভ্যানচালক স্বামীর সংসারে বাড়তি জোগান দিতেন। নাসিমা-কামাল দম্পতির দুই সন্তান মেহেরাজ হোসেন বিজয় (১৮) ও জিসান হোসেন( ১৩)। শত কষ্টের মাঝেও দুই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন একদিন ওরা পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হবে, হাল ধরবে সংসারের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় স্বপ্ন পূরণের সে পথে আর এগুতে পারেনি ১৮ বছর বয়সী বিজয়। মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে পড়াশোনা ছেড়ে নেমে পড়েছে কাজে।
২০২১ সালের জুলাই মাসে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ব্রেন স্ট্রোক করেন নাসিমা। পরে তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
এর প্রায় তিনমাস পর আবার প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা শুরু হলে তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাকে ঢাকা মেডিক্যালে বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎক জানান নাসিমার মাথায় মাথায় টিউমার হয়েছে।
জমিজমা বিক্রির টাকায় ঢাকা মেতিক্যালে অস্ত্রোপচার করে বাড়িতে ফেরার কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার মাথায় ব্যথা শুরু হয়। ফের তাকে ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার দেখা যায় মাথায় জমাটবাঁধা রক্ত ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে।
নাসিমা জানান, চিকিৎসক বলেছে নিয়মিত রেডিওথেরাপি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। কিন্তু সে চিকিৎসার খরচ মেটানোর মত আর কোনও সম্বল নেই তাদের। জমিজমা যা ছিল বিক্রি করে এতদিনের চিকিৎসা চলেছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে দিন পার করতেই কষ্ট হয়। ওষুধ কিনতে পারেনা ঠিকমত। চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সাহায্য চেয়েছেন অসহায় নাসিমা বেগম।
নাসিমার স্বামী কামাল হাওলাদার জানান, ‘টাকার অভাবে তাকে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার যতটুকু ছিল সব ব্যয় করেছি। ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। তাই সরকার ও সমাজের ধনী লোকদের কাছে আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চাই।’
নাসিমার ছেলে জিহাদ হোসেন বলেন, ‘আপনার আমার মাকে বাঁচান। আমরা গরিব মানুষ আমাদের টাকা-পয়সা নাই। আপনারা টাকা পয়সা দিলে আমার মা বাঁচতে পারবে।’
স্থানীয় কামাল মাতুব্বর জানান, আমরা গরিব মানুষ, এরপরও যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তাদের যে অবস্থা ঠিকমত খেতেই পারছে না। সরকার এবং বিত্তবানরা যদি তাদের জন্য একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে নাসিমা সুস্থ হয়ে উঠবে।
ঝাউদি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ফিরোজ মুন্সী বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তাকে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে। এলাকার অন্য জনপ্রতিনিধিরাও নাসিমার চিকিৎসার জন্য সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদাউসি আক্তার বলেন, আবেদন করলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করা হবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দীন বলেন, নাসিমা বেগম আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করা যেতে পারে।