গুন্ডামী করা ছাত্রলীগ দিয়ে কী হবে, প্রশ্ন রাবি অধ্যাপকের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বসবাস করা কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব, আসন-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলেই আসছে। এভাবে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে সোহরাওয়ার্দী হলে নির্যাতনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরদের মানববন্ধন থেকে এমন মন্তব্য করেন তারা।

গত রোববার সোহরাওয়ার্দী হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।

এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি শিক্ষার অনুকূল না। যে হলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে সেগুলো ও বসবাসের উপযুক্ত না। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নাম নিয়ে অসংখ্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এমন কোন হল নাই যেখানে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ছয় বা আট মাস ধরে নতুন ভাইস চ্যান্সেলর আসার পরে একটা তৎপরতা শুরু হয়েছিল। যেসব হল থেকে শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের নেতারা বের করে দিয়েছিল তাদেরকে আবার হলে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ন্যায্য সিটগুলোতে তাদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার পরও ছাত্রলীগের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সবচেয়ে হতাশার বিষয় তাদের এমন অপকর্মের বিচার হয়না।

অধ্যাপক মামুন আরও বলেন, যারা আজকে আওয়ামী লীগের সাথে কিংবা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকে তারা হয়তো একটু সম্মান নিয়ে বাঁচে। কিন্তু তারা বাদে অন্য মানুষের আর কোন সম্মান নেই। এই পরিস্থিতিতে যে ট্রমার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা পার হয় তার আসলে ক্ষমা হয় না। আজকে কৃষ্ণের সাথে যেটা ঘটলো, শিবির সন্দেহে তাকে যে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো, মারা হলো কিন্তু পরে হিন্দু জানার পরে বলল ‘তোকে মারা আরও সহজ তুই তো মাইনোরিটি। তোকে মারলে কেউ কিছু করতে পারবে না।’

আল মামুন বলেন, ২২ বছর আগে রাজনীতি করেছি। তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখেছি। অন্য দল বা মত কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের বড় নেতাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আজকের ছাত্রলীগকে যেভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি তখনকার ছাত্রলীগের ইতিহাসের সাথে মেলনা। এই ছাত্রলীগ নেতাদের এই গুন্ডামী, সন্ত্রাসী আচরণ আমরা চাইনা।

মানববন্ধনে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ক্যাম্পাস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ জায়গা কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা এই ক্যাম্পাসে সবথেকে অনিরাপদ। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমার মেয়েরাও এ নির্যাতন থেকে বের হতে পারছে না। মেয়েদেরকেও নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করা হচ্ছে। আমরা পুরো বাংলাদেশের উন্নয়ন করে ফেলছি কিন্তু আমার ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব র‍্যাংকিং নিয়ে চিন্তা করছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে পারছি না। কৃষ্ণ রায়ের উপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে প্রায় মৃতের মতো অবস্থা তার। তার বাবা নেই, অসহায় পরিবার থেকে উঠা আসা। সে এই নির্যাতনের ঘটনা সে ভুলবে কীভাবে? আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই না হলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠবে।

মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সপ্নীল রহমান বলেন, এমন ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে চলতে না দেওয়ার একটি অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিন। তাহলে দেখা যাবে আগামীতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন আর কোনো কৃষ্ণ রায় নির্যাতিত না হয় প্রশাসনের কাছে সেই দাবি জানান তিনি।

এদিকে, দেশের শিক্ষাঙ্গণগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নৈরাজ্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে প্রতীকি অনশন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খাঁন। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খানের সাথে প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে যোগ দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।