উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল মুখোমুখি হচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্টার মিলান। দুই দলের ১১ জন করে ফুটবলাররা যেমন মাঠের লড়াইয়ে নিজেদের সেরাটা নিঙরে দেবেন। তেমনি ডাগআউটে লড়াইটা হবে দুই কোচেরও। মাঠের খেলার কৌশল ও মনস্তাত্তিক লড়াইও ফল নির্ধারণে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে সেটি বলাই যায়। ফাইনালের আগে নিজেদের রণকৌশল তৈরি করে নিয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা ও ইন্টার মিলানের কোচ সিমিওনে ইনজাগি।
কোচ হিসেবে অর্জনের দিক থেকে ইনজাগির থেকে যোজন যোজন এগিয়ে গার্দিওলা- এমনটি বললে খুব একটা অত্যুক্তি করা হবে না। বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখের মতো ক্লাবকে নেতৃত্ব দেয়ার পর দ্বায়িত্ব নেন ম্যানচেস্টার সিটির। কাঙ্খিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের জন্যই এই ম্প্যানিয়ার্ডকে পাখির চোখ করে এনেছিলো সিটিজেনরা।
দুই মৌসুম বার্সার ‘বি’ দলের ম্যানেজার থাকার পর দ্বায়িত্ব পান বার্সেলোনার মূল দলের। ২০০৮-১২ তার অধীনে স্বপ্নের মতো সময় পার করে বার্সেলোনা। লিওনেল মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তাদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন প্রায় অভেদ্য এক দল। টিকিটাকার হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনে প্রতিপক্ষকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন অহরহ। বার্সার হয়ে ৩টি লিগ শিরোপা ও ২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন পেপ গার্দিওলা। এর মধ্যে দ্বায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমেই কাতালানদেরর ট্রেবল এনে দিয়েছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখের দ্বায়িত্ব নেন। বাভারিয়ানদের হয়ে ৩টি বুন্দেসলিগা জিতলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারেননি। আর ম্যানসিটির ডাগআউটে আসার পর প্রিমিয়ার লিগের মতো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতাকে একপেশেই বানিয়ে ফেলেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। পকেটে পুড়েছেন ৫টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা।
সবমিলিয়ে কোচিং ক্যারিয়ারে ৩৪টি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন পেপ গার্দিওলা। যা তাকে এনে দিয়েছে সর্বকালের সেরাদের স্বীকৃতি। এবার আরেকটি বিরল কীর্তি হাতছানি দিচ্ছে তাকে। ফাইনালে জিতলেই স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের পাশে নাম লেখাবেন তিনি। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ট্রেবল জিতিয়েছিলেন তিনি। যে রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেনি কেউ। সেই সাথে একমাত্র কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জয়ের মাইলফলকও স্পর্শ করবেন ৫২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ কোচ।
ইন্টার মিলানের কোচ সিমোনে ইনজাগির লক্ষ্যটা খানিকটা ভিন্ন। ইতালির ফুটবলে তাঁকে ডাকা হয় ‘কাপের রাজা’ নামে। কোচ হিসেবে ইনজাগি যা জিতেছেন, তা পুরোটাই ইতালির ফুটবলে। ইনজাগির কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু লাৎসির হাত ধরে, ২০১৬ সালে। লাৎসির হয়ে ২টি ইতালিয়ান সুপার কোপা ও ১টি কোপা ইতালিয়া জিতেছেন তিনি। ২০২১ সালে ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার প্রথম মৌসুমেই কোপা ইতালিয়া ও ইতালিয়ান সুপার কোপা জেতেন ইনজাগি। এই মৌসুমেও এই দুটি শিরোপাই ঘরে তুলেছেন। সিরি ‘আ’ শিরোপা জিততে না পারলেও ১৩ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তুললেন মিলানকে। এবার এগিয়ে যাওয়ার পালা তারও।
তবে ফাইনালে জেতার চাপটা থাকবে দুজনের উপরই। সব চাপ সামলে গার্দিওলা হয়ে উঠবেন সেরাদের সেরা নাকি ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ বিন্দুর দেখা পাবেন ইনজাগি- সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।