বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ভারতের নয়াদিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন বার্তা দেন পররাষ্ট্রসচিব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে এ সফর হওয়ায় তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে এসব নাকচ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না। এটা একটা রুটিন মেকানিজম। সেখানে দুদেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের এ বৈঠকে অগ্রাধিকার যেসব বিষয় আছে- রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি. বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সংক্রান্ত, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন সহায়তা, কনস্যুলার সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয় থাকবে। এর বাইরেও আলোচনা হতে পারে।
দুই দেশের যৌথ পরামর্শক সভার পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সম্পর্ক বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে ভারত যাচ্ছেন কি না— জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রসচিবের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, আপনারা মেলাতে পারেন। সাধারণত গত এক বছরে আমাদের অগ্রগতি রয়েছে। সেগুলোর একটা টেকিং টকস এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে আমরা কোন কোন জায়গায় আরও বেশি জোর দিতে পারি। যেন সময় নষ্ট না হয়, বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। সেগুলো থাকতে পারে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমি মনে করি না— অপ্রয়োজনীয় অন্য কোনো হিডেন (লুকোনো) এজেন্ডা আছে। যেহেতু নির্বাচন সামনে, তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো কিছু জানার থাকে সেটা অবহিত করতে পারব। তবে আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না।
চলতি বছরে দুইবার এফওসি করার কারণ ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, পর্যালোচনা করার জন্য যেতেই পারি। একাধিকবার হবে না (এফওসি) এমন কোথাও বলা নাই। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটির গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, কানেক্টিভিটি সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন কিন্তু অনেকটা শেইপের মধ্যে এসে গেছে। নর্থ ইন্ডিয়া, মাতারবাড়ি আছে জাপানের সম্পৃক্ততার। ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের আগ্রহ আছে, আমেরিকার আছে। আমরা কি কি ধরনের প্রজেক্টস নিতে পারি সেখানে। আমরা আমাদের আউটলুকস বলেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করার সুযোগ আছে।
আলোচনায় আরও কি কি থাকতে পারে, তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, গ্লোবালের স্বার্থ সংরক্ষণে কীভাবে আমরা কাজ করতে পারি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে কীভাবে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা বাড়াতে পারি, সে বিষয়গুলো এখানে আলোচিত হবে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও তাদের আপডেট দেব। কারণ, আমরা সবসময় তাদের সহযোগিতা চেয়ে এসেছি।
এজেন্ডায় শুরুতে রাজনীতির প্রসঙ্গ রাখেন মাসুদ বিন মোমেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদের নির্বাচন আছে সামনে। আমাদেরও নির্বাচন আছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটা তো খুবই বহুপাক্ষিক সম্পর্ক; ট্রেড আছে, বিনিয়োগ আছে, পিপল টু পিপল কন্টাক্ট আছে, ভিসা ইস্যু আছে— এগুলো যেন নির্বাচনের পরও স্মুথলি চলতে পারে।
এ সফরকে রাজনৈতিক সফর বলা যায় কি না— জানতে চাওয়া হয় মাসুদ বিন মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন আমি জানি না। আমি মনে করি- নিয়মিত যে মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে। এটা ঠিক যে সামনে আমাদের নির্বাচন আছে।
উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার আমন্ত্রণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর দ্বিতীয় দফায় আগামী শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। সভায় ঢাকার পক্ষে মাসুদ বিন মোমেন এবং দিল্লির পক্ষে বিনয় কোয়াত্রা যার যার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্র ছাড়াও, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।