কেমন আছেন শহিদুল ইসলাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের ব্যস্ততম এলাকা মহিপুর কলেজ মোড়ে দেখা হয় পঞ্চাশোর্ধ শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন। চলতি বছর পেশা পরিবর্তন করে ভ্যান চালাচ্ছেন। কেমন আছেন শহিদুল ইসলামের মতো মানুষেরা, জানার চেষ্টা করেছেন মুহূর্ত নিউজের প্রতিবেদক এস. এম. বাবু।

বাবু: শহিদুল ভাই বলেনতো আসলে কেমন আছেন?
শহিদুল: জানে বাঁইচ্যা আছি ভাই। খুব কষ্ট কই কইর‌্যা চলছি। এ হালেই দিন চইল্যা যাইছে।

বাবু: আপনার পরিবারে মানুষ কয়জন?
শহিদুল: আমার স্ত্রী আর দুটা মেয়ে আছে।


বাবু: তাহলে তো আপনার ছোট পরিবার, কেমন চলছে সংসার?
শহিদুল: ছোট পরিবার হলেও তো চলছেনা ভাই, আগে পাঁচ হাজার টাকায় মাসের খরচ হয়্যা যাইতো আর এখন তো সাত হাজারেও কুলাইতে পারছি না। গরীব মানুষ দিনে ধরেন ৪০০ টাকার মতন ইনকাম হইছে, বাজার খরচ সেখ্যান থ্যাকাই করি, ফের ভ্যানের কোনো কিছু সারাইতে হইলে তখন বাজারের খরচ থ্যাকা টাকা টান দিতে হয়। আগে মনে করেন কিছু জমা হইতো এখন সেটা তো পারছিন্যা উল্টা পকেটে থ্যাকা দিতে হৈছে।


বাবু: আয় কি কিছু বেড়েছে?
শহিদুল: নারে ভাই, সবকিছুর খরচ বাইড়াছে কিন্তু ইনকাম বাড়েনি। ভ্যানের ভাড়া বেশি চাহিলে প্যাসেঞ্জার উঠবেনা সে ভয়ে ভাড়াও বাড়াইতে পারিনা।


বাবু: তাহলে তো খুব মুশকিলে পড়েছেন।
শহিদুল: মুশকিলের কথা কি কইহ্যা শেষ করা যাইবে? আগে সপ্তাহে দু’ তিনদিন মাছ, মাসে ধরেন দুবার ফারামের (ফার্মের) মুরগি কিন্যাছি, এখন কোনো সপ্তাহে একবার মাছ কিনতে পারি, কোনো সপ্তাহে পারিনা। মুরগির কথা মনে হইলেও কুলাইতে পারছিনা। প্রতিদিনই কিছুনা কিছু না কিনাই বাড়ি যাই। ধরেন আইজ নুন কিনি তো কাইল হলুদ মরিচ কিনি, এভাবে চলছি।


বাবু: আপনার সন্তানদের বয়স কেমন? পড়াশোনা করছে তারা?
শহিদুল: বড় মেয়ে এই যে মহিপুর কলেজে ডিগ্রিতে পড়ে। টাকার অভাবে মেয়েকে ইংরেজির মাস্টারের কাছে পড়াইতে পারিনা। ছোট মেয়েকে এক স্যার মাসে ৩০০ টাকায় পড়াইতে রাজি হয়েছে বইলা প্রাইভেট পড়তে পারছে। নিজেতো স্কুলে যাইতে পারিনি, খুব ইচ্ছা মেয়ে দুটাকে লেখাপড়া শেখাব। এ্যারঘে (ওদের) লাইগ্যা কিছু টাকা জমাইতে পারলে খুব ভালো হইতো, কিন্তু সংসারই চলছেনা জমাব আর কীভাবে?


বাবু: কোনো জায়গা থেকে কিছু সহযোগিতা পান?
শহিদুল: গত রোজার ঈদের আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ কেজি আর কোরবানি ঈদের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল পায়াছি।


বাবু: বাজারের এরকম অবস্থা হল কেন জানেন কিছু?
শহিদুল: সান্ধের বেলা (সন্ধ্যায়) গাঁয়ের বাজারে চা’র দোকানে খবর দেখি টিভিতে। রাশিয়ার সাথে কোন দেশের যুদ্ধ লাইগ্যাছে সে কারণে সব জিনিসের দাম বাইড়াছে। সবাইতো কহিছে (বলছে) সামনের বছর আরও নাকি অবস্থা খারাপ হৈবে। ভাই যুদ্ধটা থামানোর কোনো ব্যবস্থা কেউ করেনা? চেহারায় রাজ্যের হতাশা নিয়ে এমন প্রশ্ন করেন ভ্যানচালক শহিদুল।