কেন যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিলেন মেসি?

ফুটবল বিশ্বের এই মুহুর্তের সবচেয়ে কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর মিলেছে দুই দিন আগেই। জল্পনা-কল্পনা অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর ঘোষণা দিয়েছেন লিওনেল মেসি নিজেই। দলবদলের বাজারে মেসিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল ও তার পুরনো ক্লাব বার্সেলোনা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামি তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখালেও, এই দুই ক্লাবের আলোচনায় তারা অনেকটা পর্দার পেছনেই পড়ে ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত সৌদি ক্লাবের অর্থের ঝনঝনানি কিংবা বার্সার আবেগী ধরনকে পাশ কাটিয়ে মায়ামিতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।

অর্থ কিংবা প্রভাব- এর কোনটিই মেসির সিদ্ধান্তের পেছনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেনি। আল হিলালের ১.২ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব আকর্ষণ করতে পারেনি মেসিকে। বার্সা ছাড়াও কয়েকটি ইউরোপিয় দলের প্রস্তাব থাকলেও, কাতালান ক্লাবটি ছাড়া অন্য কোথাও খেলবেন না বলে জানিয়েছেন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল মুন্দো ও মুন্দো দেপোর্তিভোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। ফলে উত্তর আমেরিকাকে নিজের ভবিষৎ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।

পিএসজির সাথে চুক্তি ফুরোনোয় বার্সা সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে বলে। তবে বার্সা দৈন আর্থিক অবস্থা এবং উয়েফার বেতন সংক্রান্ত নীতি সে পথে ছিলো বড় বাঁধা। যদিও মেসিকে ফেরানোর বিষয়ে বার্সাকে লা লিগা সবুজ সংকেত দিলেও, তা কতটা বাস্তব সম্মত হতো- সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আবার মেসিকে পেতে গেলে বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে ছেড়ে দিতে হতো কাতালান ক্লাবটিকে, বেতন কমাতে হতো আরো বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারের। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা ছিলো জটিলই। মেসি নিজেও চেয়েছিলেন বার্সায় ফিরতে। তবে দুই বছর আগে যেভাবে বিদায় নিয়েছিলেন স্পেন থেকে, সেরকম পরিস্থতির পুনর্মঞ্চায়ন করতে চাননি বলেই বার্সায় যাননি মেসি।

ইন্টার মায়ামির প্রস্তাবও খুব একটা মন্দ নয়। যদিও মেসির সাথে চুক্তির বিশদ এখনো জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রের খবর, মেসিকে দলে নেয়ায় মৌসুম প্রতি ৫৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে মায়ামিকে। সেই সাথে বিশ্ববিখ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাডিডাস’ ও টেক কোম্পানি ‘অ্যাপল’ থেকেও মোটা অঙ্কের অর্থ পাবেন তিনি। আবার ক্যারিয়ার শেষে ইন্টার মায়ামির মালিকানার একটি অংশও তাকে দেয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহামের মালিকানাধীন ক্লাবটি নিজেদের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে দলে ভেড়াতে কোন কিছুর কমতি রাখেনি। তবে এক্ষেত্রে পরিবারের বিষয়টিও বেশ গুরত্ব পেয়েছে। মায়ামির পরিবেশের সাথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেসির খাপ খাওয়াটা সৌদি আরবের থেকে অনেকটাই সহজ। আবার মায়ামিতে নিজের বাড়িও আছে মেসির। সব মিলিয়ে তাই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি লিওনেল মেসিকে। যতটুকু দ্বিধা ছিলো শুধু বার্সেলোনাকে নিয়েই। তবে ক্লাবটি থেকে দৃশ্যত কোন প্রচেষ্টার অভাব ও পুরনো তেতো স্বাদের ভয়ে বার্সার না ফেরার সিদ্ধান্ত নেন এলএমটেন।

এরই মধ্যে মেসির ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দলটির অনুসারির সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। ঘোষণার প্রথম দিনেই ইন্সটাগ্রামে ৩৫ লাখ অনুসারি বেড়েছে দলটির। এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটা বলা মুশকিল। মেসির জন্য দলকেও ঢেলে সাজাচ্ছে মায়ামি। শোনা যাচ্ছে সাবেক সতীর্থ লুইস সুয়ারেজকেও দলে ভেড়াতে চায় দলটি। ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়ের নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের একজন লিওনেল মেসিও।