কমছে কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ, সরবরাহ বাড়ছে

সরবরাহ বাড়তে থাকায় বাজারে দেশি কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। এছাড়া ভারত থেকেও কাঁচা মরিচ আমদানি করছে সরকার। ফলে পাইকারি আড়তে কাঁচা মরিচের দাম আগের তুলনায় কমেছে। যদিও খুচরা বাজারে দামের তেমন প্রভাব নেই।

রোববার দুপুর পর্যন্ত বগুড়া, পাবনাসহ মরিচ উৎপাদন হওয়া এলাকার পাইকারি আড়তগুলোতে মরিচ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এসব মরিচ সোমবার থেকে বাজারে এলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

কয়েক দিন আগে থেকে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তে থাকে। ঈদুল আজহার পরে তা অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। গত কয়েক দিন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আর খুচরা বাজারে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। দেশের কোনো কোনো এলাকায় তা ৭০০-৮০০ টাকাও কিনতে হয়েছে মানুষকে।

রোববার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা দরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। আর বিভিন্ন খুচরা বাজারে এই দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিছু বাজারে অবশ্য ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতেও দেখা গেছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. আফজাল আলী বলেন, ‘পাইকারি বাজারে রোববার পর্যন্ত তেমন দাম কমেনি। তাই খুচরা বাজারেও দাম কমেনি।

মরিচ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় পাইকারি হাটে গত শুক্রবার ও শনিবার কৃষকেরা ব্যাপারীদের কাছে মরিচ বিক্রি করেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। তবে গতকাল সেই দাম কমেছে। সাঁথিয়ার করমজা চতুর হাটে রোববার দুপুরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

করমজা চতুর হাটের ইছামতী কাঁচামালের আড়তের ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ বলেন, আজকের হাটে সকালে মরিচের জোগান কম ছিল, কিন্তু ব্যাপারী বেশি ছিলেন। তাই ওই সময় ৫০০ টাকা কেজি দরেও মরিচ বিক্রি হয়েছে। পরে জোগান বাড়লেও সে তুলনায় হাটে ব্যাপারী ছিলেন না। তাই দাম ৩০০ টাকায় নেমে আসে। মরিচের দাম এখন পড়তির দিকে বলে তার ধারণা।

বগুড়ার মহাস্থান হাটেও কাঁচা মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। এক দিনের ব্যবধানে রোববার দুপুরে সেখানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম অর্ধেক কমে ২৫০ টাকা হয়েছে। শনিবার এই স্থানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৫০০ টাকা।

ওই হাটের কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী মিনহাজ বলেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে গতকাল এক কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারি পর্যায়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ সকাল থেকেই হাটে হঠাৎ করে প্রচুর কাঁচা মরিচের সরবরাহ হয়। বেলা যত বেড়েছে, তত দাম কমেছে।

দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবার কারণে গত ২৫ জুন মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। সে সময় দেশে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২৫০ টাকা কেজি।

কাস্টমসের তথ্য বলছে, ঈদের আগে ২৬ জুন পর্যন্ত সোনামসজিদ ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩৮ হাজার ৬৭১ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে গতকাল রোববার থেকে আবারও ভারতীয় কাঁচা মরিচ দেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

রোববার সকালে কাঁচা মরিচভর্তি ছয়টি ভারতীয় ট্রাক সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি ট্রাকে ১০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ রয়েছে। ভোমরা কাস্টমসের তত্ত্বাবধায়ক ইফতেখারউদ্দিন জানিয়েছেন, ভারত থেকে আরও ট্রাক আসবে।

গত ২৬ জুন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২৭ মেট্রিক টনের মতো কাঁচা মরিচ আমদানি হয়। এই স্থলবন্দর দিয়ে আজ সোমবার ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েও গতকাল চারটি ট্রাকে করে ভারত থেকে ৪০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। শুল্কায়ন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের আমদানি মূল্য পড়েছে প্রায় ৫৬ টাকা।

যদিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সেখানেও মরিচের দাম বেড়েছে। সেখানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ রুপিতে।