ট্রেনে চড়ে কক্সবাজারে যাওয়া এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তব। অগ্রাধিকারের এই প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে আইকনিক রেল স্টেশনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার।
এর আগে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো।
১৮ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন।
শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। পরে স্টেশনের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে চড়ে রেললাইন পরিদর্শন করে রামু পর্যন্ত যাবেন। সেখান থেকে যাবেন মহেশখালী।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
মেগা প্রকল্প হিসেবে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে টেন্ডার হলে দোহাজারি-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনসট্রাকশন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পায়। কার্যাদেশ দেওয়ার পর ২০১৮ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেই হিসেবে অনুমোদানের ১৩ বছর ৪ মাস ৪ দিন পর প্রকল্পটির উদ্বোধন হচ্ছে। এই ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে মহেশখালীর মাতারবাড়িতেও। নির্মাণাধীন ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটসহ, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এ উপলক্ষে জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয়রা জানান, রেলসেবা সম্প্রসারণ, বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধনে পাল্টে যাবে পুরো এলাকার অর্থনৈতিল অবস্থা।
আজ প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন, সেগুলো হলো-
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন, ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ, ৪৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁকখালী নদীর ওপর কস্তুরাঘাট-খুরুশকুল সংযোগ সেতু, ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ভূমি ভরাট, প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, অ্যাপ্রোচ রোড ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ, উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনকরণ, মহেশখালী গোরকঘাটা-শাপলাপুর জনতা বাজার সড়ক মজবুত ও প্রশস্তকরণ, কুতুবদিয়ায় কৈয়ারবিল আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, চকরিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ঈদগাঁও জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মহেশখালী ইউনুচখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, উখিয়া রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ। তবে ২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রকল্পটি উদ্বোধনের তালিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি উদ্বোধনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
এছাড়াও আজ তিনটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে, সেগুলো হলো– ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ ও ২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রামু উপজেলা জোয়ারিয়ানালা-নন্দাখালী সড়কে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ। ১৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ (চতুর্থ পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ। একই সময় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের টার্মিনাল-১ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না।